আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্ভাব্য দেশে ফেরার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনার কর্মসূচি’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সামনে রাখতে চান যে খুব শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন।
কর্মশালায় বক্তব্য দিতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দলের নেতৃত্ব ও নীতিনির্ধারকরা বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তারেক রহমান দেশে ফিরলে দলের রাজনৈতিক কর্মপরিকল্পনা আরও এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, দেশে ফেরার সম্ভাব্য দিনটিকে কেন্দ্র করে দল যেন সংগঠিত ও প্রস্তুত থাকে, সে বিষয়ে নেতাকর্মীদের সচেতন হতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে দলের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও প্রস্তুতির দিকগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নানা বাধা ও জটিলতা রয়েছে, তবে সেগুলো মোকাবিলায় দলের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি যাই হোক, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, নির্বাচনে সফলতা অর্জনের জন্য সংগঠনের প্রতিটি পর্যায়ে সুসংগঠিত প্রচার, নীতিমালা তৈরির প্রক্রিয়া এবং কেন্দ্রভিত্তিক কাজের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে। কর্মশালার আলোচনাগুলোকে শুধু দলীয়ভাবে সীমাবদ্ধ না রেখে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তার মতে, নীতি ও কর্মপরিকল্পনা পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে পারলে ভোটারদের আস্থা অর্জন সহজ হবে।
১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ সম্পর্কেও তিনি বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের কেন্দ্রবিন্দু, এবং তার গুরুত্ব সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা বা বিতর্ক সৃষ্টি হলে তা জাতীয় সংহতিকে প্রভাবিত করতে পারে। এ বিষয়ে তিনি নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
কর্মশালায় অংশ নেওয়া দলের নেতারা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মতামত, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা ধরনের প্রভাব ও প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যা ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। এসব পরিস্থিতিতে সুসংগঠিত কাঠামো ও তথ্যভিত্তিক প্রচার কার্যক্রমের ওপর জোর দেওয়ার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশে ধর্মীয় ইস্যুর ব্যবহার এবং রাজনৈতিক বিবৃতির প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা হয়।
মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কথাও উল্লেখ করেন এবং তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চিকিৎসাজনিত কারণে তিনি বর্তমানে উন্নত পরিচর্যায় আছেন।
অনুষ্ঠানে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন। কর্মসূচিতে দলীয় নীতিনির্ধারণ, কর্মপরিকল্পনার খসড়া, নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি এবং মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম নিয়ে পৃথক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় সূত্র জানায়, কর্মশালা শেষে এসব প্রস্তাব সমন্বয় করে পরবর্তীতে দলীয় পর্যায়ে চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
বিকেলে একই কর্মশালায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ বক্তব্যে তিনি আসন্ন নির্বাচন, রাজনৈতিক কৌশল এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের সম্ভাব্য দেশে ফেরার ইঙ্গিত এবং বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতির এই ঘোষণা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তার ওপর এ ধরনের বার্তা ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।