জেলা প্রতিনিধি
জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার শিমলা বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় র্যাবের এক উপপরিদর্শকের স্ত্রী লিপি আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যার পর স্বর্ণালঙ্কার লুটের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে এবং মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শিমলা বাজারের গৌরী শংকর মাঠসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত ভাড়া বাসা থেকে লিপি আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি সরিষাবাড়ীর কামরাবাদ ইউনিয়নের শুয়াকৈর এলাকার মৃত কাদের মন্ডলের ছেলে ও র্যাব-২ এর উপপরিদর্শক (এসআই) মহর আলীর স্ত্রী। ঘটনাস্থলে তার ১১ বছর বয়সী মেয়ে নিথি আক্তার উপস্থিত থাকলেও তাকে ক্ষতি করা হয়নি; তবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের তথ্যে জানা গেছে, লিপি আক্তার দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্বামী মহর আলী কর্মসূত্রে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় অবস্থান করেন। বুধবার রাতে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ঘুমিয়ে পড়েন। ভোরের দিকে অজ্ঞাত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা বাসার গ্রিল কাটার মাধ্যমে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় লিপি আক্তার দুষ্কৃতকারীদের চিনে ফেলতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে তাকে ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় এবং বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানায়, ঘরে জোরপূর্বক প্রবেশের আলামত পাওয়া গেছে। চোরদের ব্যবহৃত উপকরণের কিছু চিহ্নও সংগ্রহ করা হয়েছে, যা তদন্তে কাজে লাগবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি পরিকল্পিত চুরি ও হত্যাকাণ্ড। তবে ব্যক্তিগত শত্রুতা বা পারিবারিক কোনো বিষয় জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় শিশুটি মানসিকভাবে ভীত হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, ভোরের দিকে ঘটনাটি ঘটায় পাশের ঘর বা আশপাশে থাকা লোকজন বিষয়টি টের পাননি। এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে ছোটখাটো চুরি ও অনধিকার প্রবেশের কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও হত্যাকাণ্ডসহ এমন দুঃসাহসিক অপরাধ আগে ঘটেনি। ফলে ঘটনাটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন।
সরিষাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাচ্ছু মিয়া বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, বাসার ভেতর এলোমেলো অবস্থার পাশাপাশি গ্রিল কাটার আলামত পাওয়া গেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে এবং হত্যাকারীদের শনাক্তে পুলিশ বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করছে। এ ছাড়া শিশুটির কাছ থেকেও ঘটনার বর্ণনা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, তদন্তের অংশ হিসেবে আশপাশের বাড়ি, সড়ক ও দোকানে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের কাজ চলছে। পাশাপাশি এলাকার পরিচিত চোরচক্র বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদেরও নজরদারিতে আনা হয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, ভোরবেলায় সীমিত সময়ের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে এবং হত্যাকারীরা ভিকটিমকে চিনত বা তার চলাফেরা সম্পর্কে পূর্ব ধারণা রাখত।
এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে লিপি আক্তারের স্বামী মহর আলীর সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি ঢাকায় কর্মস্থলে অবস্থান করায় তাৎক্ষণিকভাবে জামালপুরে পৌঁছাতে পারেননি। পরিবারের অন্যান্য সদস্যও খবর পেয়ে এলাকায় আসছেন বলে জানা গেছে।
এই হত্যাকাণ্ড এলাকায় নিরাপত্তাহীনতার নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনার পরপরই এলাকায় টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং আশপাশের সন্দেহজনক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ বলছে, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা কি না, নাকি কোনো চক্র এর সঙ্গে জড়িত, তা নিশ্চিত হতে আরও তদন্ত প্রয়োজন।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ, ঘটনার সময়সীমা এবং আরও প্রমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। পুলিশ আশা করছে, প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে।