1. admin@deshmediabd.info : admin :
  2. support@bdsoftinc.info : adminr :
রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদঃ
কক্সবাজারে সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের পর জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হল আদানির অভিযোগে বিপিডিবির এলসি নবায়নে ব্যর্থতা, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে উদ্বেগ বিটিআরসিতে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতি: শ্বেতপত্রে চিহ্নিত ৩৮ কর্মকর্তার মধ্যে পদোন্নতির প্রস্তুতি জোরদার জামায়াত–এনসিপি আসন সমঝোতা: বিভেদ, দরকষাকষি ও জোটের চূড়ান্ত রূপরেখা লাস ক্রুসেসে গুলিবিদ্ধ হয়ে ডেসিরে মার্টিন নিহত শহীদ ওসমান হাদি হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের দাবিতে শাহবাগে গণ-অবস্থান, দেশজুড়ে অবরোধ স্বর্ণের দামে টানা সপ্তমবার বৃদ্ধিতে নতুন রেকর্ড দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ , উদ্ধার বোমা তৈরির সরঞ্জাম চাঁপাইনবাবগঞ্জে তরুণকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে কুপিয়ে গুরুতর জখম, জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কিয়েভে রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অভিযোগ—”রাশিয়া যুদ্ধ শেষ করতে চায় না”

শহীদ ওসমান হাদি হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের দাবিতে শাহবাগে গণ-অবস্থান, দেশজুড়ে অবরোধ

রিপোর্টার
  • আপডেট : রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ২ বার দেখা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম পরিচিত মুখ, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি রাজধানীর পুরানা পল্টনে গুলিবিদ্ধ হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান। ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হলেও অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়, যেখানে ছয় দিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা ও তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও বিচার কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সংগঠনটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। এই প্রেক্ষাপটে হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিতের দাবিতে শুক্রবার শাহবাগে সড়ক অবরোধ ও গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ইনকিলাব মঞ্চ।

শাহবাগ অবরোধ চলাকালে সংগঠনটির সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের ঘোষণা দেন, শহীদ হাদি হত্যার পেছনে জড়িত পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও সরাসরি অংশ নেওয়া সব আসামিকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তারা রাজপথে অবস্থান চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, “আমাদের আর ঘরে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সারা দেশ থেকে জনতা শাহবাগে আসছে। যতক্ষণ পর্যন্ত জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার না করা হচ্ছে, আমরা রাজপথ ছাড়ছি না।” জাবেরের ঘোষণার পর শনিবার রাত ১১টা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান চালিয়ে যান সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। ওই সময় সেখানে উপস্থিত হন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী।

গণ-অবস্থানস্থলে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার শহীদ হাদি হত্যার সঙ্গে জড়িত এবং এর পেছনে যারা ছিলেন সবাইকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে কাজ করছে। তদন্ত প্রক্রিয়ায় কিছু তথ্য এখনই প্রকাশ করা সম্ভব নয়, কারণ তথ্য প্রকাশ যেন প্রতিপক্ষকে শক্তিশালী না করে, সেদিকে সরকার সতর্ক রয়েছে।” তিনি আরও জানান, “আগামী ৭ জানুয়ারির মধ্যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এই হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে এবং এর পর দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলীও ৭ জানুয়ারির মধ্যে চার্জশিট দাখিলের বিষয়ে সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আমরা তথ্য-প্রমাণ যাচাই-বাছাই করে দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।”

তবে সরকার ও পুলিশের দেওয়া ৭ জানুয়ারির সময়সীমা প্রত্যাখ্যান করে সংগঠনটি। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের পাল্টা দাবি জানিয়ে বলেন, “আগামী ৩ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করতে হবে এবং ২৬ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।” তিনি তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার গতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ‘দ্রুততম সময়’ বলতে কী বোঝায়, তা জানি না। আমরা স্পষ্ট সময় চাই। ২৬ কার্যদিবসের মধ্যেই বিচার কার্যকর করতে হবে।” তিনি আরও মন্তব্য করেন, “এই খুনের সবচেয়ে ছোট গুটি হচ্ছে যে সরাসরি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, কিন্তু পরিকল্পনা ও নির্দেশদাতাদের চিহ্নিত করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার রাত ১২টার দিকে শাহবাগ ত্যাগ করে সংগঠনটি এবং পরবর্তী ধাপে দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করে। শহীদ হাদি হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচারের দাবিতে রোববার দুপুর ২টা থেকে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দেয় ইনকিলাব মঞ্চ। অবরোধের ঘোষণা দিয়ে সংগঠনের মুখপাত্র বলেন, “আমাদের আন্দোলন শুধু শাহবাগে সীমাবদ্ধ নয়। সারা দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও জনতার অংশগ্রহণে সর্বাত্মক অবরোধ পালিত হবে।” এতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহসহ সব বিভাগীয় শহরে সড়ক, রেল ও নৌপথে কর্মসূচি পালনের ইঙ্গিত দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, গুলি ও সহিংসতার ঘটনাগুলোর বিচারিক জবাবদিহি নিয়ে জনপরিসরে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা আস্থার সংকট বাড়ায় এবং সহিংসতা পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি তৈরি করে। আইন বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে ফৌজদারি মামলার চার্জশিট দাখিলের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক সময়সীমা না থাকলেও সরকার চাইলে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, দ্রুত বিচার আইন বা স্বল্পমেয়াদি আদালত কাঠামোর মাধ্যমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিচার সম্পন্ন করতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে তদন্তের মান, সাক্ষ্য-প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা ও ন্যায়বিচারের নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হয়।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা কেবল অপরাধীর শাস্তি নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, ভুক্তভোগী পরিবারের অধিকার সংরক্ষণ এবং সমাজে আইনের শাসনের প্রতি আস্থা তৈরির পূর্বশর্ত। এ ধরনের মামলায় দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার দাবি উঠলে রাষ্ট্রকে একই সঙ্গে তদন্তের নির্ভুলতা ও বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হয়, যাতে আইনি চ্যালেঞ্জ বা সাক্ষ্যগত দুর্বলতার সুযোগ তৈরি না হয়।

ইনকিলাব মঞ্চের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, অবরোধ কর্মসূচির সময় জননিরাপত্তা, যানবাহন চলাচল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারপক্ষ থেকে বলা হয়, তদন্ত প্রক্রিয়া নির্ভুলভাবে শেষ করার জন্য তারা নির্ধারিত সময়সীমা ঘোষণা করেছে এবং সেই লক্ষ্যেই চার্জশিট প্রস্তুতের কাজ চলছে।

হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্নের দাবি রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে গণ-আবেগে রূপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে ভূমিকা রাখবে। অপরদিকে, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো বলছে, তথ্য-প্রমাণের যাচাই-বাছাই শেষ করে আইনানুগভাবে চার্জশিট দাখিলই তাদের অগ্রাধিকার, যাতে বিচার প্রক্রিয়া শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ায় এবং প্রকৃত অপরাধীরা কোনো আইনি ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে।

শহীদ ওসমান হাদির মৃত্যু ও বিচার দাবির আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্ম দিয়েছে—রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিচার কত দ্রুত ও কত নির্ভুলভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব এবং গণ-আকাঙ্ক্ষা ও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে ভারসাম্য কীভাবে রক্ষা করা হবে। ইনকিলাব মঞ্চ ঘোষিত কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয়, তা পর্যবেক্ষণে রয়েছে দেশ।

s
এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2021 deshmediabd.com