জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
আদানী পাওয়ার লিমিটেড সম্প্রতি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বিরুদ্ধে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) নবায়নে ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) ধারা ১৩.২(১) অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বৈধ ও পর্যাপ্ত এলসি বজায় রাখা বিপিডিবির দায়িত্ব। এলসি নবায়ন না হওয়া শুধু চুক্তি লঙ্ঘন নয়, বরং এটি বিদ্যুৎ সরবরাহের ধারাবাহিকতা ও আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ঋণদাতাদের আস্থা ক্ষুণ্ণ করছে।
২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর আদানি পাওয়ার লিমিটেড (প্রাক্তন এপি জে এল) ও বিপিডিবির মধ্যে স্বাক্ষরিত পিপিএ-তে বলা হয়েছে, বিপিডিবিকে সময়মতো বৈধ এলসি নবায়ন করতে হবে। এই এলসি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের নিরাপত্তা হিসেবে কাজ করে। তবে গত ১৮ জুলাই থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে সাত দফা চিঠি পাঠানো সত্ত্বেও বিপিডিবি এলসি নবায়ন করেনি। এ কারণে আদানি পাওয়ার এ পরিস্থিতিকে ‘ইভেন্ট অব ডিফল্ট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এলসি নবায়ন না হওয়া শুধু চুক্তি লঙ্ঘন নয়, এটি পিপিএ ও ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নে গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ঋণদাতাদেরও এতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আদানি পাওয়ার গত ১৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক ব্যর্থতার নোটিশ বিপিডিবিকে পাঠিয়েছে এবং সরকারের কাছে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানিয়েছেন, এলসি নবায়ন না হওয়া মানে হলো সরকার ঝুঁকি নিচ্ছে। এটি কোনো প্রশাসনিক ত্রুটি নয়, বরং বিপিডিবির আর্থিক সংকটের প্রতিফলন। ক্রমবর্ধমান ক্যাপাসিটি চার্জ, ডলার সংকট ও ভর্তুকি নির্ভরতা বিপিডিবির আর্থিক ভারসাম্য নড়বড়ে করে তুলেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এলসি ইস্যু দীর্ঘায়িত হলে আদানি পাওয়ার চুক্তির অধীনে বিভিন্ন বিকল্প নিতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে প্রতিকার দাবি, বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত বা স্থগিত করা এবং আন্তর্জাতিক সালিশি পর্যায়ে যাওয়া। যার প্রতিটিই বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেইন উল্লেখ করেছেন, পিডিবি চুক্তি ভঙ্গের পর্যায়ে না যাওয়ার চেষ্টা করবে, তবে তার সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক সক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, “এলসি ইস্যুতে দুই পক্ষেরই আলোচনা করে সমঝোতায় আসা উচিত। আশা করছি, পিডিবি এই বিষয়ে সমঝোতা করবে।”
এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ খাতের নীতিনির্ধারকরা উদ্বিগ্ন যে, চুক্তি লঙ্ঘন ও এলসি নবায়নে অনিশ্চয়তা ভবিষ্যতে বিদেশি বিনিয়োগকে প্রভাবিত করতে পারে এবং দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে ঝুঁকি তৈরি করবে।