নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে ঢাকার ব্রিটিশ হাইকমিশনে বুধবার যুক্তরাজ্যের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার প্রয়াণে শোক পালনের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি পালন করা হয় বলে এক আনুষ্ঠানিক বার্তায় হাইকমিশন নিশ্চিত করেছে।
বার্তায় ব্রিটিশ হাইকমিশন জানায়, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তাঁরা গভীর শোক প্রকাশ করছেন এবং তাঁর পরিবার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে বলা হয়, এই কঠিন সময়ে তাঁদের ভাবনা খালেদা জিয়ার পরিবার ও বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে রয়েছে।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর পর বুধবার থেকেই দেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন শুরু হয়েছে। সরকারের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি (শুক্রবার) পর্যন্ত এই শোক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। শোক পালনের অংশ হিসেবে বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ফলে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি–বেসরকারি সব দপ্তর ও অফিস বন্ধ ছিল। এই ছুটির সিদ্ধান্ত জাতীয় শোকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর প্রতীকী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় শোক কর্মসূচির আওতায় বুধবারসহ পরবর্তী দুই দিন দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি–বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে। একই কর্মসূচি দেশের বাইরে অবস্থিত সব বাংলাদেশি মিশনেও পালন করা হচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস, হাইকমিশন ও কনস্যুলেটগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে এবং মিশনপ্রধানরা স্থানীয় কূটনৈতিক ও প্রবাসী কমিউনিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে শোকবার্তা বিনিময় করছেন।
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ১৯৯১ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে তিনি দেশের সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর প্রথম নারী সরকারপ্রধানের স্বীকৃতি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে ২০০১–২০০৬ মেয়াদে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তাঁর সরকার অর্থনীতি, অবকাঠামো, কৃষি, জ্বালানি, শিক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে একাধিক নীতি–কৌশল বাস্তবায়ন করে। তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারকালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও দারিদ্র্য হ্রাস সূচকে ধারাবাহিক উন্নয়ন লক্ষ করা যায়। তবে তাঁর রাজনৈতিক জীবন কেবল সরকার পরিচালনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি বিরোধী দলের নেতা হিসেবেও দীর্ঘ সময় সংসদীয় ও রাজপথের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের মধ্যেও শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দলীয় কার্যালয়, সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষের উদ্যোগে শোকবই খোলা, দোয়া মাহফিল, স্মরণসভা ও নীরবতা পালনের মতো কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়ায় তাঁর রাজনৈতিক অবদান ও নেতৃত্বের কথা স্মরণ করছেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও শোকের অনুরণন দেখা গেছে। যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসী কমিউনিটির উদ্যোগে শোকসভা, দোয়া ও স্মরণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনে পতাকা অর্ধনমিত রাখার উদ্যোগটি কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ হলেও এটি খালেদা জিয়ার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতার ইঙ্গিত বহন করে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, জাপান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতারসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে কাজ করেন। তাঁর শাসনামলে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ, সন্ত্রাসবিরোধী বৈশ্বিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য, বাণিজ্য–সম্পর্ক সম্প্রসারণ, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য গতি পায়।
রাষ্ট্রীয় শোকের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি শুক্রবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। শোক পালনের সময় সরকারি–বেসরকারি সব দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার পাশাপাশি বিশেষ প্রার্থনা, দোয়া ও নীরবতা পালনের নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শোক কর্মসূচি পালনের সময় রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় মর্যাদা, শৃঙ্খলা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।