গাজীপুরের টঙ্গীর বিটিসিএল টিঅ্যান্ডটি কলোনি জামে মসজিদের খতিব ও পেশ ইমাম মো. মুহিবুল্লাহ মিয়াজী (৬৫) পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের সিতাগ্রাম হেলিপ্যাড এলাকায় মহাসড়কের পাশ থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় তাঁর দুই পা শিকল দিয়ে একটি কলাগাছের সঙ্গে বাঁধা ছিল। পরে তাঁকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মুহিবুল্লাহ মিয়াজী বুধবার সকালে টঙ্গী থেকে হাঁটতে বের হয়ে নিখোঁজ হন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে টঙ্গী থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত ডায়েরি করা হয়। পুলিশ, স্থানীয় লোকজন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফজরের নামাজের পর স্থানীয় বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের ইমাম শিহাব উদ্দিন ওই ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে এবং তাঁর পায়ে শিকল বাঁধা দেখে দ্রুত স্থানীয়দের সাহায্যে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
এ ঘটনার পর পঞ্চগড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটি। তারা এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও ইসকন নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড় শহরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
মুহিবুল্লাহ মিয়াজী হাসপাতাল থেকে বলেন, “আমি গতকাল সকাল সাড়ে সাতটার দিকে বাসা থেকে হাঁটতে বের হই। কিছুক্ষণ পর একটি অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়ায় এবং চার-পাঁচজন লোক আমাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তারা আমার চোখ বেঁধে দিয়ে আমাকে মারধর করে।” তিনি আরও বলেন, “আমাকে অবমাননা করে আমার মাকে নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করা হয়।”
এছাড়া, মুহিবুল্লাহ মিয়াজী দাবি করেন যে, গত ১১ মাস ধরে তাঁকে বেনামি চিঠি দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। চিঠিগুলোর মধ্যে তাকে অখণ্ড ভারত ও ইসকনের পক্ষে কথা বলতে, ধর্মভিত্তিক দলগুলো এবং বিএনপি-এনসিপির বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে বলা হয়েছিল। সর্বশেষ ২১ অক্টোবরের চিঠিতে তাঁকে কোরআন, ইসলাম ও আল্লাহ শব্দের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল।
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মো. মিজানুর রহমান জানান, মুহিবুল্লাহ মিয়াজী হাসপাতালে আনার পর তিনি কিছুটা অচেতন অবস্থায় ছিলেন, তবে চিকিৎসা গ্রহণের পর সকাল ৯টার দিকে তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়। তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং অতীতে দুটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে। তবে, চিকিৎসকরা বলেছেন, তাঁকে নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ানোর কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। মুহিবুল্লাহ মিয়াজী জানিয়েছেন যে, তাকে মারধর করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি জানান, মুহিবুল্লাহ মিয়াজী গতকাল নিখোঁজ হওয়ার পর টঙ্গী থানায় ডায়েরি হয়েছে এবং ইতিমধ্যে পঞ্চগড়ের পুলিশ বিষয়টি জানানো হয়েছে। টঙ্গী থানার পুলিশ এবং মুহিবুল্লাহ মিয়াজীর স্বজনরা পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
গাজীপুরের মসজিদের খতিব মুহিবুল্লাহ মিয়াজীকে পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার হওয়ার পর তাঁকে মারধরের অভিযোগ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, গত ১১ মাস ধরে তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের সংগঠন ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটি এই ঘটনায় বিক্ষোভ করেছে এবং ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং তদন্তের আওতায় সব পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।