রাজনীতি ডেস্ক
জাতীয় ইমাম-খতিব সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তার দল রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে ন্যায়পরায়ণতা ও ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে ‘ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ’ গঠনে কাজ করবে। রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত জাতীয় ইমাম-খতিব সম্মেলনে তিনি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এসব বক্তব্য তুলে ধরেন।
সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, সমাজে ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠার যে আদর্শ ইসলামী শিক্ষায় গুরুত্ব পায়, রাষ্ট্র পরিচালনায় বিএনপি সেই নীতিকে প্রাধান্য দিতে চায়। এসময় তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইমাম, খতিব, মুয়াজ্জিন, আলেম ও ওলামাদের দোয়া ও সমর্থন প্রত্যাশা করেন। একই সঙ্গে নিজের পরিবার, দলের নেতা-কর্মী এবং দেশের মানুষের জন্য দোয়া কামনা করেন।
সম্মেলনে ইমাম-খতিবদের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য সার্ভিস রুল প্রণয়নকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তারেক রহমান বলেন, দেশের অসংখ্য মসজিদে স্থানীয় কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের কর্মসংস্থান নির্ভর করে, যা অনেক ক্ষেত্রে তাদের পেশাগত স্থায়িত্বে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। তিনি জানান, রাষ্ট্রক্ষমতায় সুযোগ পেলে বিএনপি সার্ভিস রুল প্রণয়নকে অগ্রাধিকার দেবে এবং অন্যান্য দাবিগুলোও বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেবে।
তারেক রহমান ইমাম-খতিবদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রতিটি দাবি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট আলেমদের নিয়ে পৃথক কমিটি গঠন করে সুপারিশমালা দিলে তা নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে এমন একটি সামাজিক কাঠামো গড়ে তুলতে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেখানে মুসলমানরা কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী ধর্মীয় জীবন নির্বিঘ্নে পালন করতে পারবেন, আর অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নিরাপদে নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি চর্চা করতে পারবেন।
সংবিধানের কিছু দিক নিয়ে তিনি তার বক্তব্যে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে অতীতে রাষ্ট্রপরিচালনার পরিবর্তন এসেছে, এবং ভবিষ্যতেও সংবিধানে বিদ্যমান ধর্মীয় মূল্যবোধের অবস্থান সুসংহত রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি সংবিধানের বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে মতামত তুলে ধরেন, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক আলোচনায় প্রভাব ফেলতে পারে।
বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন বা ধর্মীয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত হওয়ার ঘটনা অতীতে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল এবং এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলের অবস্থান পরিষ্কার ছিল। তিনি বলেন, গণসমাবেশ বা ধর্মীয় সংগঠনের প্রতি কঠোর পদক্ষেপের ঘটনাগুলো দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল এবং এসব বিষয়ে আলোচনা এখনও জনমতকে প্রভাবিত করে।
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, দেশের কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসায় বর্তমানে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদিসকে সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ অতীতে নেওয়া হয়েছিল, যা ধর্মীয় শিক্ষাকে মূলধারার সঙ্গে যুক্ত করতে ভূমিকা রাখে। তিনি জানান, দেশে মোট সাড়ে তিন লাখের বেশি মসজিদে প্রায় ১৭ লাখ ইমাম, খতিব ও মুয়াজ্জিন দায়িত্ব পালন করছেন, যাদের পেশাগত উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে টেকসই উন্নয়ন অর্জন কঠিন।
তারেক রহমান বলেন, ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিনরা সমাজে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তিনি মনে করেন, আর্থিকভাবে অনগ্রসর ধর্মীয় কর্মীদের জন্য সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সম্মানী প্রদান, তাদের আর্থিক স্বাবলম্বিতা বৃদ্ধি এবং কল্যাণ ট্রাস্ট শক্তিশালী করার জন্য বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমেও তাদের সম্পৃক্ত করার চিন্তাভাবনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সম্মেলনে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন। তারা ইমাম-খতিবদের পেশাগত উন্নয়ন, ধর্মীয় শিক্ষার মানোন্নয়ন, সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আলোচকরা ধর্মীয় নেতাদের রাজনৈতিক প্রভাব, সামাজিক দায়িত্ব এবং তরুণ প্রজন্মের নৈতিক শিক্ষায় তাদের ভূমিকার বিষয়েও বক্তব্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের একজন সিনিয়র ইমাম। বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মাদ্রাসা শিক্ষক, খতিব ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ইমামরা। তারা ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য সার্ভিস রুল, কল্যাণ তহবিল শক্তিশালী করা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতের বিষয়ে সুপারিশ তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা মতবিনিময়ের মাধ্যমে ইমাম-খতিবদের পেশাগত কাঠামো সুসংগঠিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন, যা ভবিষ্যতে নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।