শিক্ষা ডেস্ক
ভোলা, শনিবার, ২৯ নভেম্বর: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানিয়েছেন, আগামী বছরের শুরুতেই দেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষার্থী তাদের পাঠ্যপুস্তক হাতে পাবেন। জেলা পর্যায়ে ইতোমধ্যে বেশিরভাগ বই বিতরণ হয়ে গেছে, তাই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের কাছে সব বই পৌঁছানোর নিশ্চয়তা তিনি দিয়েছেন।
শনিবার ভোলা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, যেসব বিদ্যালয় আসন্ন নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে, সেগুলোর দ্রুত মেরামত ও প্রস্তুতির জন্য ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য দেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য একজন শিক্ষার্থীকে মাতৃভাষায় সাবলীলভাবে পড়তে, বুঝতে এবং লিখে প্রকাশ করতে সক্ষম করে তোলা। এ প্রসঙ্গে তিনি ‘ভাষাগত স্বাক্ষরতা’ অর্জনের গুরুত্বের উপর জোর দেন। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের গাণিতিক ধারণাগুলোর যথাযথ শিক্ষাদান নিশ্চিত করা সরকারী নীতি। শিক্ষার্থী যেন যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগের মৌলিক নিয়মগুলো সঠিকভাবে আয়ত্ত করতে পারে এবং সমস্যার সমাধানে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়—এটিও প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ডা. পোদ্দার আরও বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজির সঙ্গে পরিচয় করানোও সরকারের নীতি। এই সব ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নও সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক পরিকল্পনার অংশ। তিনি জানান, প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রদান ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
এর আগে, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোলা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হলরুমে ‘পিইডিপি-৪ এর চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্নির কৌশল নির্ধারণ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। সেমিনারে ভোলার জেলা প্রশাসক ডা. শামীম রহমান সভাপতিত্ব করেন।
সেমিনারে তিনি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সংক্রান্ত সকল দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। শিক্ষার মান বৃদ্ধি, পাঠ্যপুস্তকের সময়মতো বিতরণ, বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়ন—এসব বিষয়ে তিনি সরকারি উদ্যোগ ও নির্দেশনার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সরকারের এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি মনোযোগ বাড়াতে, মৌলিক ভাষাগত ও গাণিতিক দক্ষতা উন্নত করতে এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক সময়ে বই বিতরণ এবং শিক্ষকের দক্ষতা বৃদ্ধি শিক্ষার মানোন্নয়নে সরাসরি প্রভাব ফেলবে, যা প্রাথমিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য পূরণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
প্রসঙ্গত, পিইডিপি-৪ প্রকল্প দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মানোন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের অন্যতম প্রধান পরিকল্পনা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষকের প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়নও নিশ্চিত করা হচ্ছে।