নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা, শনিবার, ২৯ নভেম্বর: আগামী গণভোটে মোট চারটি প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে। ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অফিসের ভাষণে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্যালট পেপারে ভোটারদের কাছে প্রশ্নটি হ্যাঁ বা না উত্তরভিত্তিকভাবে উপস্থাপন করা হবে। মূল প্রশ্নটি হবে: “আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবসমূহের প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?”
প্রস্তাবিত চারটি বিষয়ের মধ্যে প্রথমটি হলো নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা। দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী জাতীয় সংসদ দুই কক্ষবিশিষ্ট হবে এবং উচ্চকক্ষের ১০০ সদস্য নির্বাচিত হবে, যেখানে সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবটি সংসদে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদসহ ৩০টি বিষয়ে ঐকমত্য বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ বিষয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে। চতুর্থ প্রস্তাবটি হলো, জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংবিধান সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়ন করবে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, ব্যালট পেপারের এই হ্যাঁ-না বান্ডেল প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে ভোটাররা সরাসরি সংবিধান সংস্কারের প্রতি সম্মতি বা অসম্মতি জানাতে পারবেন। ভোটারদের সহজতর এবং স্বচ্ছ ভোট নিশ্চিত করার জন্য কমিশন বিভিন্ন প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে।
পেশাগত পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, চারটি বিষয়কে একটি সমন্বিত প্রশ্নের আকারে উপস্থাপন করার ফলে ভোট প্রক্রিয়ার জটিলতা কমানো সম্ভব হবে। এছাড়া, প্রতিটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত কাঠামো এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা স্পষ্ট হওয়ায়, ভোটের ফলাফল বাস্তবায়নযোগ্য হবে।
ইসির বক্তব্য অনুযায়ী, আগামী গণভোটে অংশগ্রহণকারীদের তথ্য সরবরাহ, ভোটার তালিকা যাচাই, এবং ব্যালটের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ভোটারদের শিক্ষামূলক প্রচারণা এবং কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে যাতে ভোট প্রক্রিয়ার গুরুত্ব এবং প্রস্তাবিত বিষয়গুলোর অর্থ বোঝা যায়।
সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত এ ধরনের গণভোট বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক কাঠামো, আইনপ্রণয়ন প্রক্রিয়া, এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই গণভোটের ফলাফলের প্রভাব আগামী সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে এবং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নে তা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
সভ্যতা এবং সংবিধান বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গণভোটের গুরুত্ব বিবেচনা করে, ইসি সকল নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করতে নানা ধরনের প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এতে ভোটারদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার সুচারুভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হবেন।
সংক্ষিপ্তভাবে, এই চারটি প্রশ্নের মাধ্যমে দেশের সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়াকে জনগণের সরাসরি অনুমোদন বা সমর্থন দেওয়ার সুযোগ মিলবে, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং সংবিধান প্রয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।