জাতীয় ডেস্ক
শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত একদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৭২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এই সময়ে ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৩৭৭ জনে স্থিত রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত একদিনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৯০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৩২ জন, ঢাকা বিভাগের (সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে) ১১৬ জন, ঢাকা উত্তর সিটির ১৩২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৬৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ৩২ জন এবং সিলেট বিভাগের ৩ জন।
একই সময়ে সারা দেশে ৫৭০ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মোট ৯১ হাজার ২২২ জন রোগী ডেঙ্গু থেকে সেরে বাড়ি ফিরেছেন।
জানুয়ারি থেকে বর্তমানে পর্যন্ত এ বছরের মোট হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯৩ হাজার ৭৬৬ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৩৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কিছুটা কমে এসেছে। ২০২৪ সালের পুরো বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ এক হাজার ২১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭০৫ এবং ভর্তি রোগীর সংখ্যা তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানাচ্ছেন, ডেঙ্গু মূলত মশার মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ায় বাড়ি ও আশপাশের পানির জমে থাকা স্থান, অপরিষ্কার পরিবেশ ও ছত্রাকযুক্ত এলাকা থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তাই বন্যা বা বর্ষার পরে বাড়ি ও আশপাশে পানি জমতে দেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা সাধারণত দ্রুত এবং যথাযথ চিকিৎসা হলে সাফল্যমণ্ডিত হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বেশি সংখ্যকই জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা ও ত্বকে দাগ–ছাপসহ অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর সময় রোগীকে পর্যাপ্ত পানি খাওয়ানো, বিশ্রাম নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দ্রুত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
চলতি বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত পরামর্শ ও সতর্কতা প্রচারণা চালাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলে রোগী ভর্তি বৃদ্ধি এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীর ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যা নগরায়ণ ও জনসংখ্যা ঘনত্বের কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং সংক্রমণরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ ধরনের রোগের বিস্তার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পাশাপাশি স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়মিতভাবে মানুষকে সচেতন করার কাজ চালাচ্ছেন। চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব পর্যবেক্ষণ, রোগ শনাক্তকরণ ও দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়িতে পানি জমতে না দেওয়া, মশারি ব্যবহার, পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ও প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রিভেন্টিভ ওষুধ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চলমান বর্ষাকালে বৃদ্ধি পেতে পারে, তাই সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ সমন্বিতভাবে অব্যাহত রাখতে হবে।