জাতীয় ডেস্ক
ভারতে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রত্যর্পণ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্লেখ করেছেন, ভারতের পক্ষ থেকে প্রথমে কামালকে প্রত্যর্পণ করা হবে। তবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, তাঁর কাছে এ ধরনের কোনো অফিসিয়াল তথ্য নেই এবং এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: পরিবর্তনশীল বিশ্বে একটি প্রাসঙ্গিক ভূমিকা নির্ধারণ’ শীর্ষক সেশনে তৌহিদ হোসেন এই স্পষ্টকরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কামালকে যে প্রথমে প্রত্যর্পণ করা হবে, সে ধরনের কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। অফিসিয়াল কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।” এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি প্রচারিত তথ্য এবং সরকারি পক্ষের বাস্তব অবস্থার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
পটভূমি হিসেবে জানা যায়, গত বছর জুলাই মাসে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসাদুজ্জামান খান কামালকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। একই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। এরপর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য কূটনৈতিক চিঠি পাঠায়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটি প্রথম নয়। গত বছরের ডিসেম্বরে শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে তৎকালীন সময়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রত্যর্পণ কার্যক্রম শুরু হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত দাবির সঙ্গে সরকারি কার্যপ্রক্রিয়ার বাস্তবতা মিলছে না বলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্পষ্ট করেছেন।
এই বিষয়ে কূটনৈতিক এবং আইনি দিক দুটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী মামলায় প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় পক্ষের মধ্যে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক আলোচনার পরই কোন ধাপে প্রত্যর্পণ কার্যক্রম শুরু হবে তা নির্ধারিত হয়। দ্বিতীয়ত, সামাজিক মাধ্যমে তথ্যের দ্রুততার সঙ্গে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা থাকায় সরকারিভাবে প্রাপ্ত তথ্যের গুরুত্ব অপরিসীম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রকাশিত তথ্যই প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ার যথাযথ দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রয়োজন রয়েছে। এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের স্বার্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সামগ্রিকভাবে, আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গে যে তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে, তা সরকারি অবস্থানের সঙ্গে মিলছে না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত বা অফিসিয়াল নির্দেশনা প্রকাশিত হয়নি। ফলে ভবিষ্যতে প্রত্যর্পণ কার্যক্রম কবে এবং কীভাবে বাস্তবায়িত হবে তা সরকারি ঘোষণার অপেক্ষায় থাকছে।
এই ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্ব বহন করছে। আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ দুই দেশের কূটনৈতিক ও আইনি সহযোগিতার জন্য একটি পরীক্ষার পরিস্থিতি তৈরি করছে। পাশাপাশি, এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতিমালা এবং আইনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার ওপরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।