রাজনীতি ডেস্ক
রাজনৈতিক অঙ্গনে সেবামুখী শাসনব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা বিস্তার এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমির ডা. শফিকুর রহমান সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে দলীয় অবস্থান ও অগ্রাধিকার তুলে ধরেছেন। রোববার দুপুরে আয়োজিত ‘প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাভাবিক প্রসব সেবা প্রদানে কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডারদের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সামনে তিনি দেশের সার্বিক সেবাব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
প্রারম্ভিক বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময়ে জনগণকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়িত হয়নি বলে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, একটি রাষ্ট্রের প্রতি জনগণের আস্থা সৃষ্টি করতে হলে বাস্তবমুখী কর্মসম্পাদন অপরিহার্য। তার মতে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব হলো প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি দৃশ্যমান কাজের মাধ্যমে অগ্রগতি নিশ্চিত করা। অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন যে, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় সকল নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনেই দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান উল্লেখ করেন, প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাভাবিক প্রসব সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা একটি মৌলিক স্বাস্থ্য অধিকার। তিনি বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মরত কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডাররা মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন। এই কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, পর্যাপ্ত সরঞ্জাম এবং কার্যকর নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে মাতৃমৃত্যু ও নবজাতক জটিলতার হার আরও কমানো সম্ভব। তার মতে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন শুধু অবকাঠামো বৃদ্ধির মাধ্যমে নয়, বরং মানবসম্পদ উন্নয়ন ও মাঠপর্যায়ের সেবাদাতাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে।
তিনি আরও বলেন, যদি কোনো রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তবে নাগরিকদের মৌলিক সেবা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন বা আন্দোলনের প্রয়োজন হওয়া উচিত নয়। বরং রাষ্ট্রব্যবস্থা এমনভাবে পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন, যাতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা ও প্রশাসনিক সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। বক্তৃতায় তিনি দাবি করেন যে, কার্যকর সেবা নিশ্চিত করা গেলে প্রশাসনিক জটিলতা ও ধীরগতির কারণে জনগণের ভোগান্তি অনেকাংশে দূর হবে।
সেমিনারে ডা. শফিকুর রহমান তাদের দলীয় সামাজিক উদ্যোগ প্রসঙ্গেও বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহে অনিয়মিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো কার্যকর রাখতে সৌরবিদ্যুৎ নির্ভর ব্যবস্থার গুরুত্ব বিবেচনায় তারা ১০০টি ক্লিনিকে সৌর প্যানেল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন। তার মতে, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে চিকিৎসাসেবা বিঘ্নিত হওয়া একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। বিকল্প জ্বালানিনির্ভর এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রসবসেবা চলমান রাখতে সহায়ক হবে।
শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের বর্তমান শিক্ষা কাঠামোতে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে এবং বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার দিকনির্দেশনায় আরও পেশাগত দক্ষতার প্রয়োজন। তার মতে, শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও শিক্ষাক্রম নির্ধারণে অভিভাবক ও সমাজের পাশাপাশি শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি শিশুকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা গেলে তারা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতাভিত্তিক শিক্ষা একটি দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন কাঠামো তৈরিতে সহায়ক।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারী স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষজ্ঞ ও সংগঠকরা দেশের প্রান্তিক এলাকার মাতৃস্বাস্থ্য পরিস্থিতি, কর্মীদের চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন দিক আলোচনা করেন। বক্তারা বলেন, জাতীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী উদ্যোগের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে সেবা বৃদ্ধি করতে হিসাবভিত্তিক পরিকল্পনা ও নিরবচ্ছিন্ন তত্ত্বাবধান অপরিহার্য।
অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন সামনে এনে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কৌশলের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। বক্তাদের মন্তব্য অনুযায়ী, দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা নিশ্চিত করা, কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করাই দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় অগ্রগতির ভিত্তি তৈরি করতে পারে।