জাতীয় ডেস্ক
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যদি দেশে ফিরে আসতে চান, তবে এক দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার তার জন্য প্রয়োজনীয় ট্রাভেল পাস ইস্যু করবে। তিনি বলেন, তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে কোন স্ট্যাটাসে আছেন, তা সরকার জানে না। দেশে প্রত্যাবর্তন করতে চাইলে অন্য কোনো দেশ যদি তাকে আটকায়, সেটি স্বাভাবিক নয়।
রোববার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত “বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: পরিবর্তনশীল বিশ্বে একটি প্রাসঙ্গিক ভূমিকা নির্ধারণ” শীর্ষক সেশনে তৌহিদ হোসেন এ মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে, তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কিছুটা সময় নিচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দুই দেশের মধ্যে ওয়ার্কিং রিলেশন দ্রুত স্বাভাবিক হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বর্তমানে ভারতে আছেন। যদিও বিষয়টি জানা আছে, তবুও দিল্লি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রদান করেনি। তাঁকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি।
শেখ হাসিনা ইস্যুতে তৌহিদ হোসেন বলেন, তাকে ভারত ফেরত না দিলেও ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক বন্ধ হবে না। দণ্ডিত হওয়ায় তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেরত আনার প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা দেশে ফেরত যায়নি। তিনি উল্লেখ করেন, সব রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর জন্য একটি সুসংগঠিত রোডম্যাপ থাকা প্রয়োজন। আশেপাশের দেশগুলোর স্বার্থও মিয়ানমারের এই পরিস্থিতিতে জড়িত, যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এই সমস্যার সমাধান কীভাবে করা হবে, তা এখনো সম্পূর্ণরূপে জানা নেই। তিনি সতর্ক করেন, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি প্রয়োজন, যা বাস্তবায়নে প্রায় ১৫ বছরের সময় লাগতে পারে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের মন্তব্যগুলো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রতিবেশী দেশগুলোর কূটনৈতিক অবস্থান এবং মানবিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে। তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত প্রক্রিয়া দু’টি বিষয়ই বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের সঙ্গে স্থিতিশীল কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নীতি নির্ধারণে শক্তিশালী অবস্থানে রাখতে পারে। এতে উভয় ক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ তৈরি হবে।
তৌহিদ হোসেনের বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, বাংলাদেশ সরকার প্রতিটি কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও নিয়মবদ্ধভাবে পরিচালনা করার চেষ্টা করছে, যাতে রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যাবর্তন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও মানবিক সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে সমন্বিত ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।