নিজস্ব প্রতিবেদক
মীর কাশেম আলীর ছেলে, ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম (আরমান) সম্প্রতি নিখোঁজ বা গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনুসন্ধান এবং বিচার সংক্রান্ত কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় আট বছর ‘আয়না ঘরে’ বন্দি ছিলেন।
টেলিভিশন আলোচনায় ব্যারিস্টার আরমান তাঁর পিতা মীর কাশেম আলীর রাজনৈতিক অবস্থান ও ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর পিতা স্বাধীনতার বিরোধিতা করলেও কোনো সহিংস কর্মকাণ্ড বা যুদ্ধাপরাধে সরাসরি জড়িত ছিলেন না। তিনি এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন যে রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকা—দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
আরমান জানান, তাঁর পিতা দেশের নিরাপত্তা এবং ভৌগোলিক অবস্থার কারণে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, বাংলাদেশের ছোট আয়তন, চারপাশে শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং অতীতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ইতিহাস বিবেচনা করে তখনকার নেতারা ভাবতেন, স্বাধীনতা অর্জন করলে দেশ রাজনৈতিক এবং ভৌগোলিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, “স্বাধীনতা কাম্য ছিল, তবে আমরা ভেবেছিলাম আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সিকিমের মতো দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। যদি আমরা জানতাম দেশ মুসলিম পরিচয় নিয়ে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াবে, আমরা কখনো বিরোধিতা করতাম না। আমাদের কাজ ছিল দেশের স্বার্থ বিবেচনা করা।”
আরমানের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁর পিতা রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন, কিন্তু কোনো মানুষ হত্যা বা সহিংস অপরাধে তিনি জড়িত ছিলেন না। তিনি মন্তব্য করেছেন, স্বাধীনতার বিরোধিতাকে ‘জুডিশিয়ারি কিলিং’ হিসেবে দেখা উচিত নয়, কারণ এটি রাজনৈতিক মতের ভিন্নতা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে পার্থক্য বোঝায়।
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় পিতার অবস্থান দেশের নিরাপত্তা ও সামরিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। আরমানের এই বিবৃতি বর্তমান রাজনৈতিক বিতর্কের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষত মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়-দায়িত্ব নিয়ে।
গুম বা নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনুসন্ধান কমিশনের কাছে অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে আরমান বাংলাদেশের অতীত এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত বিতর্কিত বিষয়গুলো পুনঃআলোচনার সুযোগ তৈরি করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের তথ্য এবং ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা দেশের ইতিহাসকে আরও বিস্তৃত ও সমৃদ্ধ দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আরমানের এই মন্তব্যগুলো সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে, যেখানে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তাঁর পিতার রাজনৈতিক অবস্থান ছিল স্বাধীনতার বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতে, কিন্তু কোনো ধরনের সহিংসতা বা মানবতাবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে তার কোনো সরাসরি সংযোগ ছিল না। এই বিবৃতি মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাস এবং সংশ্লিষ্ট নীতি-নৈতিকতা নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।