জাতীয় ডেস্ক
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্য থেকে আগত চারজনের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম কাজ শুরু করেছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে দলটি হাসপাতালে এসে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে স্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে চিকিৎসা পরিকল্পনা নিয়ে সমন্বয় শুরু করে।
হাসপাতাল-সংশ্লিষ্ট একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া বর্তমানে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটপূর্ণ। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তিনি প্রদত্ত চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ দলটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ ব্যবস্থাপনা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা, ঝুঁকির মাত্রা এবং প্রয়োজনীয় সাপোর্ট সিস্টেম পর্যালোচনা করে একটি সমন্বিত চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রণয়নে যুক্ত রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. রিচার্ড বিউল। আগমনের পর প্রথম দিনেই তিনি ও তাঁর সহযোগীরা খালেদা জিয়ার ক্লিনিক্যাল নোট, সাম্প্রতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট এবং চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ডকুমেন্টেশন পর্যালোচনা করেন। এরপর স্থানীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকে তাঁরা রোগ-পরিচর্যার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে মতবিনিময় করেন।
সূত্র বলছে, বিদেশি বিশেষজ্ঞরা মূলত খালেদা জিয়ার বহুবিধ দীর্ঘমেয়াদি রোগ ও বিদ্যমান জটিলতাগুলো সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে রোগ ব্যবস্থাপনার উন্নত দিকনির্দেশনা, অর্গান সাপোর্ট সিস্টেমের প্রয়োগ এবং চিকিৎসার অগ্রগতির ওপর নজর দেওয়া হবে। স্থানীয় মেডিকেল টিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রম আরও সুসংহত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে দলটি।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় গত ২৩ নভেম্বর রাতে তাঁকে গুলশানের বাসা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাঁকে ভর্তি করা হয় এবং তখন থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থায় ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, ফুসফুসের সমস্যা ও চক্ষু-সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন। এসব জটিলতা তাঁর সামগ্রিক শারীরিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলছে, যা চিকিৎসকদের মতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং আধুনিক রোগ ব্যবস্থাপনার দাবি করে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের এই বিশেষজ্ঞ দল যুক্ত হওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত ও উন্নত কাঠামো গড়ে ওঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। রোগীর জটিলতা বিবেচনায় তাঁদের আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা চিকিৎসা পরিকল্পনাকে আরও সুসংগঠিত ও কার্যকর করে তুলতে পারে। স্থানীয় মেডিকেল টিমের সঙ্গে যৌথভাবে চিকিৎসকেরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সাপোর্ট সিস্টেম মূল্যায়ন করছেন।
এভারকেয়ার হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছে, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সংশ্লিষ্টতা রোগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং সামগ্রিক চিকিৎসা কার্যক্রমকে আরও আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে এগিয়ে নেবে। খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা এবং বহুবিধ জটিলতা বিবেচনায় চিকিৎসকদের দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জও বাড়ছে, তবে সমন্বিত মেডিকেল বোর্ডের আওতায় তাঁর চিকিৎসা চলমান রয়েছে।
চিকিৎসার পরবর্তী ধাপগুলো নির্ধারণে বিদেশি ও স্থানীয় চিকিৎসকদের যৌথ মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সম্ভাব্য পরিবর্তন, নতুন চিকিৎসা কৌশল যুক্ত করা এবং ধারণাগত ঝুঁকিগুলো কমিয়ে আনা—এসব বিষয়েই মেডিকেল টিম এখন গভীরভাবে কাজ করছে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা–সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ নিয়মিতভাবে হালনাগাদ করা হবে বলে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।