জাতীয় ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। তবে বর্তমানে তারেক রহমান দেশে ফেরার বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত উদ্যোগ নেননি। গত ২৯ নভেম্বর ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ ‘একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়’। এর পর থেকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশে প্রবেশের পর বিমানবন্দর থেকে তিনি বিশেষ সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) এর নিরাপত্তা সুবিধা পাবেন। বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা সমমর্যাদার ব্যক্তিদের এ ধরনের নিরাপত্তা প্রদান করা হয়। সম্প্রতি সরকার খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করে তাকে এসএসএফ নিরাপত্তা দিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে ব্যক্তিগত কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা নেই।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসার পরিস্থিতি তারেক রহমানের দেশে ফেরার সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) তার খালেদা জিয়ার মেডিকেল টেস্ট রয়েছে। টেস্টের রিপোর্ট নেতিবাচক হলে বিদেশে নেওয়ার সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করা হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী, তারেক রহমান ডিসেম্বরের ১১ তারিখের মধ্যে দেশে ফিরতে পারেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন এবং পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে তিনি শিগগিরই দেশে আসবেন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, তারেক রহমানের দেশে না ফেরার বিষয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন রয়েছে। কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক নিরাপত্তা ঝুঁকিকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, দেশে তার নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নিশ্চিত করেছেন, কারো যদি বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়, তা পূরণের জন্য সরকার প্রস্তুত।
এছাড়া, পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ও তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে তার বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্ট মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। দেশে ফেরার জন্য তাকে বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করতে হবে, অথবা ট্রাভেল পাস নিতে হবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে তারেক রহমান চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা সম্ভব, তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখনও তা চাননি।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলোর সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং বিদেশে নেওয়ার সম্ভাব্যতা তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময়সূচি নির্ধারণে প্রধান প্রভাব ফেলছে। সরকারের পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত থাকায় সম্ভাব্য যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন এবং দেশে ফেরার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও স্বাস্থ্যগত সব দিক বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি দলের নেতৃত্ব, ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং দলীয় সমন্বয়ের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।