জাতীয় ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা চালু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ উদ্যোগের আওতায় বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা পর্যন্ত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের মাধ্যমে মোট ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭ জন প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। ইসির অ্যাপভিত্তিক হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৮ জন পুরুষ এবং ১৮ হাজার ১৪৯ জন নারী।
লিড প্যারাগ্রাফ
ইসি জানিয়েছে, অ্যাপে নিবন্ধিত প্রবাসী ভোটারদের নির্দিষ্ট সময়ে ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো হবে এবং ভোটাররা ব্যালটে ভোট দিয়ে তা ফিরতি খামে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন। প্রবাসীদের ভোট নিশ্চিত করতে কমিশনের এই নতুন উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৯ নভেম্বর শুরু হওয়া অনলাইন নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে আগামী ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
মূল প্রতিবেদন
ইসির কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগে সক্ষম না হওয়ায় তাদের ব্যাপক আগ্রহের প্রেক্ষিতে এবার ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ব্যবস্থায় বিদেশে বসবাসরত ভোটারেরা সরাসরি ব্যালট পেপার ডাকযোগে গ্রহণ, ভোট প্রদান এবং ভোট ফেরত পাঠাতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের মতে, এতে ভোট প্রদানের প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ হবে এবং প্রবাসী সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য ইসি প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিত করেছে। যেসব দেশে প্রবাসীরা অ্যাপের মাধ্যমে ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারছেন তার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, মিশর, মোজাম্বিক, লিবিয়া, মরিশাস, হংকং, ব্রাজিল, উগান্ডা, কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্রী, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, বতসোয়ানা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, তানজানিয়া, সোমালিয়া, ঘানা, গিনি, মরক্কো, দক্ষিণ সুদান, চিলি, সিয়েরা লিওন, ইকুয়েডর, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গাম্বিয়া, পেরু, জিম্বাবুয়ে, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবসহ আরও কয়েকটি দেশ।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রতি নিবন্ধনকারীকে যাচাই শেষে ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো হবে। ভোটাররা ব্যালট পাওয়ার পর নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে তা আবার ডাকযোগে পাঠাতে পারবেন। এই পুরো প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে বিশেষ কোডিং ব্যবস্থা এবং নির্বাচন-সংক্রান্ত দলিল যাচাইয়ের প্রক্রিয়া যুক্ত করা হয়েছে। এতে ডাকযোগে ব্যালট সংগ্রহ ও ফেরত পাঠানোর সময় কোনো অনিয়ম বা জালিয়াতির সুযোগ কমবে বলে আশা করছে কমিশন।
এদিকে, প্রবাসী ভোটারদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হওয়ায় ইসি এ খাতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইসির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি নিয়মিতভাবে দেশের বাইরে বসবাস করেন, যাদের বড় একটি অংশই বয়স ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ভোটার হতে সক্ষম। কমিশন জানিয়েছে, প্রবাসী ভোট বৃদ্ধি পেলে নির্বাচনের সার্বিক অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব আরও দৃঢ় হবে। সে লক্ষ্যেই প্রবাসীদের ভোটে আকৃষ্ট করতে প্রচারণা, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং দেশভেদে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হচ্ছে।
প্রযুক্তিনির্ভর এই পোস্টাল ব্যালট প্রক্রিয়া বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে একটি নতুন অধ্যায় বলে মনে করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত ভোটারদের প্রথমবারের মতো সুবিধাজনকভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা মনে করছেন, অনলাইন নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে আরও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী ভোটার এতে যুক্ত হতে পারেন। এতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়বে এবং নির্বাচনের বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা আরও সুদৃঢ় হবে।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে ইসি দেশীয় ও প্রবাসী সব ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম জোরদার করেছে। প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার মাধ্যমে এবার নির্বাচনের সার্বিক প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তিগত সংযোজন ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।