জাতীয় ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির আবেদনের পর কাতার সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মতি জানিয়েছে। ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার সকালে এই সম্মতির কথা বিএনপিকে জানানো হয়।
বিএনপি সূত্র এবং কাতার দূতাবাস সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সাম্প্রতিক জটিলতা বিবেচনায় নিয়ে দলটি বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করতে আনুষ্ঠানিক আবেদন করে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই দোহা সরকার এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানায়। সম্মতি পাওয়ার পর এখন প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া, সময়সূচি এবং আনুষঙ্গিক পদক্ষেপ নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে যোগাযোগ চলছে।
বর্তমানে খালেদা জিয়া রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও চিকিৎসকরা পরিস্থিতিকে জটিল মনে করছেন। শ্বাসকষ্টের কারণে গত ২৩ নভেম্বর রাতে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক পরীক্ষায় ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরে তাকে ভর্তি করা হয় এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। গত রোববার ভোরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসক দল নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখলেও বয়স, পূর্বের অসুস্থতা এবং জটিল সংক্রমণের কারণে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি এখনও উল্লেখযোগ্য বলে চিকিৎসাসংক্রান্ত সূত্রে জানা গেছে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তার জন্য যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বেলে ইতোমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন চীনের চারজন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, যারা বর্তমান চিকিৎসা পরিকল্পনা পর্যালোচনা করছেন। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের এই উপস্থিতি চিকিৎসার পর্যায়গুলো সমন্বিতভাবে মূল্যায়নে চিকিৎসক দলের সহায়তা করছে।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। সেখানে তিনি কয়েক দফায় হাসপাতালে ভর্তি হন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা চালিয়ে যান। প্রায় চার মাস চিকিৎসার পর ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে কিছুদিন স্বাভাবিক চিকিৎসা চললেও গত নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে পরিস্থিতি দ্রুত জটিল হয়ে ওঠে।
কাতার সরকারের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর সম্মতি পাওয়ায় এখন মূল বিষয় হচ্ছে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, অনুমোদন এবং চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত। বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মূল্যায়ন ও অনুমোদন, ভ্রমণযোগ্য শারীরিক অবস্থা এবং প্রয়োজনীয় নথি–অনুমতির বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিএনপি নেতারা আশা করছেন, সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে দ্রুতই রোগীকে বিদেশে নেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে একটি আলোচিত বিষয়। তার স্বাস্থ্যঝুঁকি ও চিকিৎসাবিষয়ক সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক দল, সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং জনসাধারণের মধ্যে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি জটিল অসুস্থতার রোগীদের ক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসা সুবিধা কখনো কখনো দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। এ কারণে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তটি চিকিৎসাগত ও প্রশাসনিক উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ।
কাতারের সম্মতি প্রাপ্তি বিষয়টিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিলেও পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ-উপযোগিতা, চিকিৎসকদের সর্বশেষ মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় অনুমতির ওপর। চিকিৎসক দল রোগীর বর্তমান অবস্থা, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি এবং ভ্রমণের ঝুঁকি মূল্যায়ন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং বিদেশে চিকিৎসার সম্ভাব্যতা এখন সংশ্লিষ্ট মহলে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষিত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনে চিকিৎসা অগ্রগতি, প্রশাসনিক প্রস্তুতি এবং কাতারের সঙ্গে সমন্বয় প্রক্রিয়ার ওপর নজর থাকবে বলে জানা গেছে।