রাজনীতি ডেস্ক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চলমান শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন যে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্তের পথে। শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীর পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে তিনি এ তথ্য জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কয়েক সপ্তাহ ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার চিকিৎসায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যুক্ত থাকলেও পরিস্থিতির উন্নতির স্বার্থে তাকে আরও উন্নত সুবিধাসম্পন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে তাকে লন্ডনের একটি হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা ও চিকিৎসাবিষয়ক সমন্বয় এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কাতার থেকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনার প্রক্রিয়া চলছে এবং নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়সূচি স্থির হলে ৭ ডিসেম্বর তাকে ইংল্যান্ডে স্থানান্তর করা হতে পারে। মির্জা ফখরুল বলেন, চিকিৎসক দলের মূল্যায়ন অনুসারে বিদেশে নেওয়া হলে তার জন্য জরুরি উন্নত পর্যায়ের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বিএনপি মহাসচিব অনুষ্ঠানে আরও বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বেগম খালেদা জিয়া বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার শারীরিক জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। রোগের প্রকৃতি ও জটিলতার কারণে উন্নত প্রযুক্তি, বিশেষায়িত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় প্রয়োজন। চিকিৎসকদলের পরামর্শ অনুযায়ী বিদেশে নেওয়া হলে সমন্বিত চিকিৎসা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএনপি নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছেন। দলীয় নেতাদের মতে, তার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা মানবিক ও চিকিৎসাগত জরুরত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানান, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে গেলে একাধিক প্রশাসনিক, আইনি ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। এসব প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে চিকিৎসকদের মূল্যায়ন ও পরামর্শকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। দলীয় নেতারা আরও জানান, বিদেশের হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ, চিকিৎসার ধরন নির্ধারণ, প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত, ভ্রমণ-সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি মূল্যায়নসহ বিভিন্ন দফায় কাজ এগিয়ে চলছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক মানের নিবিড় পরিচর্যা এবং বহুবিষয়ক বিশেষজ্ঞ দলের সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কার্যকর হতে পারে। বিদেশে নেওয়া হলে রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী বিশেষায়িত চিকিৎসার পরিধি বাড়ে, যা রোগী পুনর্বাসন ও সুস্থতার সম্ভাবনা বাড়াতে সহায়ক।
বিএনপি নেতারা জানান, চিকিৎসাবিষয়ক সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে নির্ধারিত সময়ে বিদেশযাত্রা সম্ভব হবে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সময়সূচি পাওয়া গেলে পরবর্তী ধাপ চূড়ান্ত করা হবে।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া নেতারা আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের শারীরিক জটিলতা মোকাবিলায় চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে নিয়মিত চিকিৎসক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং হাসপাতালে তার অবস্থার সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
বিএনপি নেতৃত্ব আশা করছে, বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেলে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। দলীয় নেতাদের মতে, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। দেশে তার চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি এবং আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার প্রতিটি ধাপ দলটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।