জাতীয় ডেস্ক
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে—বিশেষ করে লন্ডনে—নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আজ রাতে মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠকে নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দলীয় পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে যে, তার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাগত বিবেচনার ভিত্তিতেই বিদেশ যাত্রা নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
গত শুক্রবার ভোরে কাতারের আমিরের উদ্যোগে পাঠানো একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে উড়োজাহাজটির যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় যাত্রার সময়সূচি স্থগিত হয়। পরে কাতার সরকার জার্মানির একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। উড়োজাহাজের ভাড়া, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা কাতার সরকারের পক্ষ থেকেই সমন্বয় করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার প্রফেসর ডা. এ কিউ এম মহসিনের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার এন্ডোস্কোপি সম্পন্ন হয়। চিকিৎসক দল জানিয়েছে, এন্ডোস্কোপির ফলাফলে তার পাকস্থলীর রক্তক্ষরণ বন্ধ হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন বলেন, দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতার প্রেক্ষাপটে এই উন্নতি ইতিবাচক হলেও সামগ্রিক শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে আরও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।
চিকিৎসা পরিকল্পনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুক্ত হয়েছেন খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরাও। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ও চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমান শুক্রবার সকালে ঢাকায় পৌঁছে সরাসরি হাসপাতালে যান। তিনি চিকিৎসক দলের সঙ্গে অবস্থার হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা করেন এবং পরবর্তী ধাপের চিকিৎসা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন। বর্তমানে মেডিক্যাল বোর্ড ও পরিবার সম্মিলিতভাবে তার চিকিৎসা পরিকল্পনা ও বিদেশে স্থানান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।
বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতা ছাড়াও চোখের সমস্যা ও অন্যান্য শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন। এসব জটিলতার কারণে তাকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও বিশেষায়িত চিকিৎসার আওতায় রাখা হচ্ছে। গত আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি মুক্তি পান। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে মোট ১১৭ দিন চিকিৎসা শেষে ৬ মে দেশে ফেরেন। এরপর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে তিনি গত ১৩ দিন ধরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা তাকে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণে রাখছেন এবং বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসার ধাপ নির্ধারণ করছেন। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে চিকিৎসকদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণই স্বাস্থ্যগত বিবেচনার ওপর নির্ভর করছে এবং চিকিৎসকরা যা উপযুক্ত মনে করবেন, দল সেই সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেবে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শারীরিক জটিলতার কারণে যেকোনো আন্তর্জাতিক যাত্রা প্রস্তুতির জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, উন্নত লাইফ সাপোর্ট সুবিধা এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ দলের উপস্থিতি প্রয়োজন। এ কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের মান ও প্রস্তুতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উড়োজাহাজ পরিবর্তনের সিদ্ধান্তও এমন বিবেচনার ফল।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তার পূর্ববর্তী চিকিৎসা ইতিহাস, বয়স, শারীরিক জটিলতার মাত্রা এবং সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। তবে বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে তার স্বাস্থ্যের স্থিতিশীলতা, ভ্রমণের সক্ষমতা এবং গন্তব্যের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রস্তুতি—সবগুলো বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে।
আজ রাতের বৈঠকে মেডিক্যাল বোর্ড তার সর্বশেষ হালনাগাদ অবস্থা পর্যালোচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা কাঠামো পর্যালোচনার পর বিদেশে স্থানান্তর সম্পর্কে চূড়ান্ত মত দেবে। বৈঠকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার প্রস্তুতি, সময়সূচি ও বিমান ব্যবস্থাপনা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরই প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে কোনো সম্ভাব্য সময়সূচি বা পরবর্তী পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে না।