জাতীয় ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও একই দিনে অনুষ্ঠেয় গণভোটে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রবাসীরা আগামী ২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত অ্যাপের মাধ্যমে পোস্টাল ভোটের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। এরই মধ্যে প্রায় দুই লাখ প্রবাসী ভোটার হিসেবে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং সিস্টেম অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন (ওসিভি–এসডিআই)’ প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমাদ খান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, অ্যাপ ব্যবহার করে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অবস্থানরত দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সঠিক ঠিকানা প্রদান করা বাধ্যতামূলক। সঠিক ঠিকানা ছাড়া পোস্টাল ব্যালট পাঠানো সম্ভব হবে না। যারা ভুল ঠিকানা দিয়েছেন, তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অ্যাপের এডিট মেন্যুর মাধ্যমে সংশোধন করার আহ্বান জানান তিনি।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ গত সোমবার জানান, প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধনের সুযোগ ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। একইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে থাকা তিন শ্রেণির ভোটার—নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা, নিজ এলাকার বাইরে অবস্থানরত সরকারি চাকরিজীবী এবং আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররা তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ১৫ দিনের জন্য পোস্টাল ভোটিংয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। এ সময়সীমাও ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
গত ১৮ নভেম্বর ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উদ্বোধনের পরদিন থেকেই বিশ্বব্যাপী অঞ্চলভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রাথমিক সময়সীমা ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকলেও রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পক্ষের অনুরোধে সময়সীমা আরও সাত দিন বাড়ানো হয়। এর ফলে প্রবাসীরা আরো সহজে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে।
প্রকল্পের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা পর্যন্ত ১ লাখ ৯৫ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি পোস্টাল ব্যালটের জন্য নিবন্ধন করেছেন। নিবন্ধিতদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি এবং নারী ভোটার ১৯ হাজারেরও বেশি। বিদেশে বসবাসরত বিপুলসংখ্যক নাগরিকের অংশগ্রহণ বাড়ায় ইসি এ প্রক্রিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছে।
দেশভিত্তিক নিবন্ধন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি—৩৮ হাজারেরও বেশি —প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন। এরপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে ১৯ হাজারেরও বেশি নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে ১১ হাজারেরও বেশি, মালয়েশিয়া থেকে প্রায় ১১ হাজার এবং যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১০ হাজারেরও বেশি প্রবাসী নিবন্ধন করেছেন। এসব দেশে বৃহৎ প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি থাকায় পোস্টাল ভোটের প্রতি তাঁদের আগ্রহ বাড়ছে বলে ইসি কর্মকর্তারা মনে করছেন।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং’ প্রক্রিয়া চালু করা সাম্প্রতিক সময়ে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। আগে দেশে অবস্থান না করলে ভোট দেওয়ার সুযোগ না থাকায় বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর ভোটাধিকার ব্যবহার করা সম্ভব হতো না। নতুন ব্যবস্থায় অ্যাপভিত্তিক নিবন্ধন, পরিচয় যাচাই ও ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোর মাধ্যমে প্রবাসীরা প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের মতে, এই প্রক্রিয়া সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যৎ নির্বাচনে আরও বেশি সংখ্যক প্রবাসী নাগরিক ভোট দিতে পারবেন। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের তথ্যসংগ্রহ, পরিচয় যাচাই এবং ভোটিং প্রক্রিয়ার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইসি আশা করছে, সময়সীমা বৃদ্ধির ফলে নিবন্ধনের সংখ্যা আরও বাড়বে এবং চূড়ান্তভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী প্রথমবারের মতো ডাকযোগে ভোট প্রদান করতে পারবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে ইসি দেশের ভেতর ও বাইরে ভোটারদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পোস্টাল ভোটের সুযোগ বৃদ্ধি এরই অংশ, যা বৃহৎ প্রবাসী জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।