জাতীয় ডেস্ক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওবার্তা এবং লিখিত ঘোষণায় তিনি এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
নিজের বার্তায় তিনি জানান, দীর্ঘ সময় পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে নাগরিকের প্রত্যাশা পূরণ এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রগঠনের লক্ষ্যে তিনি নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। তার দাবি, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বাস্তবতায় নতুন সামাজিক-রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা এবং জনকল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে হলে শক্তিশালী গণঅংশগ্রহণ প্রয়োজন।
প্রকাশিত ভিডিওবার্তায় আসিফ জানান, দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের জন্য এ সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশের সামনে এমন একটি সুযোগ এসেছে, যা রাষ্ট্রের নতুন দিকনির্দেশনা নির্ধারণে প্রভাব ফেলবে। তার মতে, রাজনৈতিক বিভাজন এবং দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা দূর করে নাগরিকের অধিকার ও কল্যাণকেন্দ্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য নীতিনির্ভর উদ্যোগ জরুরি। এজন্য তিনি প্রয়োজনীয় নীতিমালা, প্রশাসনিক সংস্কার এবং প্রতিনিধিত্বশীল সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়া ও গণসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
নিজের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নীতিরক্ষার পথ সহজ নয়। তবে দেশের ইতিহাসে যেসব ব্যক্তি ন্যায়, অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের অনুপ্রেরণায় তিনি পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চান। তার বক্তব্যে তিনি মতিউর রহমান, তারামন বিবি, নূর হোসেন, ফেলানি, আবরার ফাহাদ, আবু সাইদ ও মুগ্ধসহ বিভিন্ন সময়ের উদাহরণ উল্লেখ করে বলেন, এসব আত্মত্যাগ রাষ্ট্রকে আরও জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার দাবি জোরদার করেছে।
তিনি জানান, ঢাকা-১০ আসনে ধানমন্ডি, কলাবাগান, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট এবং কামাঙ্গীরচরের একটি অংশ অন্তর্ভুক্ত। আসন্ন নির্বাচনে ওই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ এবং নাগরিক কল্যাণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে তিনি ভোটারদের কাছে সমর্থন প্রত্যাশা করেন। তার দাবি, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষকতা, সংগঠিত কর্মী কাঠামো বা নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহারের মতো আর্থিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করছেন না; বরং নাগরিকের সমর্থনকেই তিনি প্রধান শক্তি হিসেবে বিবেচনা করছেন।
তার আরও বক্তব্য, তিনি সংসদ সদস্য পদের পাশাপাশি গণভোটের নীতিগত ধারণার প্রতিও জনগণকে সম্পৃক্ত করতে চান। নাগরিকের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে সুযোগ এসেছে, তাতে তিনি ভোটারদের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান এবং পরিবর্তনমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমর্থন প্রত্যাশা করেন।
নির্বাচন ঘিরে ঢাকা-১০সহ রাজধানীর বিভিন্ন আসনে রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়তে থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আসিফের অংশগ্রহণ এ আসনে প্রতিযোগিতায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। যদিও তিনি কোনো দলীয় সমর্থন ছাড়াই নির্বাচনে নামছেন, তবু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেক্ষাপটে তার পদত্যাগ এবং পরবর্তী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ভোটারদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঢাকা-১০ আসনটি রাজধানীর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হওয়ায় এখানকার নির্বাচনী ফলাফল সাধারণত জাতীয় রাজনীতির ওপর প্রভাব ফেলে। এই আসনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বসবাস, বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ঘনত্ব ও প্রশাসনিক কাঠামোর উপস্থিতি নির্বাচনী প্রতিযোগিতাকে আরও জটিল করে তোলে। ফলে প্রার্থীদের জন্য ভোটারদের আস্থা অর্জন, নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট করা এবং স্থানীয় সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান উপস্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচার, প্রার্থিতা যাচাই–বাছাই, প্রচারণা কর্মসূচি এবং প্রতিযোগিতার গতিবিধি কিছুদিনের মধ্যেই আরও স্পষ্ট হবে। প্রার্থীদের রাজনৈতিক অবস্থান, কর্মপরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ নীতিমালা সম্পর্কে ভোটাররা ক্রমান্বয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা-১০ আসনে ভোটাররা যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা স্থানীয় উন্নয়ন, প্রতিনিধিত্বের পরিধি এবং জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।