আইন আদালত ডেস্ক
রাজধানীতে চলতি নির্বাচনী প্রচারণার সময় সংঘটিত শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শহীদ হাদির উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ ও তদন্ত সংস্থার হাতে নতুন তথ্য উঠে এসেছে। প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডের মূল নেপথ্য ব্যক্তি ফয়সাল, যিনি বিস্তারিতভাবে পূর্ব পরিকল্পনা ও রেকি করে হামলা সম্পন্ন করেছেন।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের পরই ফয়সাল হাদিকে হত্যা করার চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। মিশন কার্যকর করার জন্য তিনি নরসিংদী, সাভার ও মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রেকি করেন। ১১ ডিসেম্বর হামলার প্রস্তুতিতে তিনি পশ্চিম আগারগাঁওয়ে বোনের বাসায় অবস্থান নেন। হামলার দিন ভোরে উবারে করে হেমায়েতপুরের একটি রিসোর্টে যান।
রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, শুক্রবার ভোর ৫টা ২২ মিনিটে ফয়সাল ও তার সহযোগী আলমগীর রিসোর্টে প্রবেশ করেন। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া ও তার বোন। ফয়সাল একটি ভিডিও প্রদর্শন করে হাদির মাথায় গুলি করার পরিকল্পনা জানান এবং ঘটনার পর সকল যোগাযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে ফয়সাল বান্ধবীকে নিয়ে রিসোর্ট ত্যাগ করেন এবং বাইরের আলমগীরের সাথে দেখা করে মোটরসাইকেলে করে আগারগাঁওয়ের বাসায় ফিরে যান।
হাদির নির্বাচনী প্রচারণা কেন্দ্রের দিকে যাত্রার সময় ফয়সাল ও আলমগীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে। হাদির মতিঝিলগামী অটোরিকশাকে পেছন থেকে অনুসরণ করা হয়। দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে ফয়সাল খুব কাছ থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোঁড়ে। হামলার পর তারা পশ্চিম আগারগাঁওয়ের বোনের বাসায় ফিরে যান। সেখানে অবস্থানকালে একটি কলিং বেলের কারণে ফয়সাল অস্ত্রভর্তি ব্যাগ নিচে ফেলে এবং মোবাইল ফোন পাশের বাসার ছাদে রাখেন।
পরবর্তীতে ফয়সাল ও আলমগীর মোটরসাইকেলের আসল নম্বরপ্লেট লাগিয়ে ছদ্মনাম্বার ব্যবহার করেন। ফয়সাল বিকেল ৪টা ৫৪ মিনিটে সিএনজিতে করে ধামরাইয়ের কালামপুর, নবীনগর ও গাজীপুর হয়ে ময়মনসিংহে পৌঁছান। রাতের পর সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, তারা হালুয়াঘাটের ধারাবাজার পেট্রোল পাম্পে পৌঁছে এবং মানবপাচারকারী ফিলিপ স্নালের মাধ্যমে সীমান্তে চলে যায়। তদন্তে দেখা গেছে, হত্যার মূল শ্যুটার ফয়সাল ভারতীয় সীমান্তে পালিয়ে গেছেন।
হত্যায় সহায়তার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ফয়সালের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়াকে। কামরাঙ্গীরচর থেকে তার বাবা-মাকে গ্রেফতারের পর, তাদের তথ্যের ভিত্তিতে তারাবোর বিল থেকে দুটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। প্রাইভেটকারচালক নুরুজ্জামানও গ্রেফতার হয়েছেন। পরে ফয়সালের বোনের বাসার নিচ থেকে হাদিকে গুলি করার ব্যবহৃত ৭.৬৫ ক্যালিবার পিস্তলের গুলি ও ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি কয়েকশ কোটি টাকার চেকও উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিএমপির মুখপাত্র মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, ঘটনার আগে ও পরে ফয়সাল পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। সব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে এবং হত্যার সঙ্গে আরও কারা জড়িত তা শনাক্তের চেষ্টা চলছে। হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি অল্প সময়ের মধ্যে আটবার হাতবদল হয়, যা একটি জটিল পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। তদন্তকারীরা এটাও খতিয়ে দেখছেন যে, উদ্ধার হওয়া বিপুল অর্থ কেবল হাদির হত্যার জন্য ছিল কিনা, নাকি আরও কিলিং মিশনের পরিকল্পনা ছিল।
এই ঘটনায় তদন্ত ক্রমবর্ধমান এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি সম্ভাব্য সকল সহযোগী চিহ্নিত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ঘটনার পেছনের বিস্তৃত পরিকল্পনা ও অর্থের উৎস তদন্তের মূল বিষয় হিসেবে ধরা হয়েছে।