গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হল নুর বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টি বিষয়ে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, না হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া বিভ্রান্তির শিকার হতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটানো বা সংঘাতমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো পক্ষ তারা চায় না, তবু জাতীয় পার্টি সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা থাকলে ভোটের সময় তা দায়স্বরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
রোববার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গণঅধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু ও সময়মতো অনুষ্ঠিত করার তাগিদ দেন এবং দেশকে একটি গণ-অভ্যুত্থানের স্বপ্ন পূরণে ন্যায়পরায়ণ, জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
নুরুল হল নুর বলেন, “নির্বাচন বিঘ্নিত হোক—আমরা এমন কোনো কাজ চাই না। কিন্তু জাতীয় পার্টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হয়ে যদি আমরা নির্বাচনে যাই, তাহলে আমাদের জন্য শনির দশা অপেক্ষা করছে।” তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, “কিছু এলাকায়—ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনাসহ যেসব এলাকা আওয়ামী লীগ হিসেবে পরিচিত—সেখানে জাতীয় পার্টির মাধ্যমে নির্বাচনে নাশকতা ও আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করা হতে পারে।” এসব বক্তব্য তিনি সংগঠনের মুখস্থ ঘোষণার পর ব্যক্তিগত মত হিসেবে প্রকাশ করেন এবং কয়টি বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
সভায় নুরুল হল নুর আরও বলেন, গত সময়ে গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র ও যুবকরা আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে; তাদের বিরুদ্ধে হামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের তথ্য তিনি উল্লেখ করেন এবং রাজনৈতিক নেতাদেরও গ্রেপ্তারের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান ও জনআন্দোলনের মূল দাবি—গণহত্যার বিচারের অগ্রগতি, রাষ্ট্র সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচন—এগুলোই তাদের আন্দোলনের মুলাধার।
জেনারেল জি এম কাদেরের উক্তি প্রসঙ্গ টেনে নুরুল হল নুর বলেন, সম্প্রতি জিএম কাদের এমন বক্তব্য দিয়েছেন যে, “আওয়ামী লীগ ছাড়া এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না” — এ ধরনের দাবি ও কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক এলাকায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, যিনি এমন বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি কীভাবে একই সঙ্গে রাজধানীর জনসভায় বা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে পারেন—এ প্রসঙ্গে তিনি কৌশলগত ও নৈতিক দ্বন্দ্বের দিকে ইঙ্গিত করেন।
নুরুল হল নুর সংগঠনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে বলেন, তারা জনসম্মুখে গিয়ে মানুষের কাছে নিজেদের ভাবনা-প্রস্তাব তুলে ধরবেন। তবে নির্বাচনের বাতায়ন প্রস্তুতকরণ ও নির্বাচন কমিশন‑প্রকৌশল নিয়ে নির্মিত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ না থাকলে তারা স্বতন্ত্রভাবে কীভাবে অংশ নেবে—সেটি এখনও রাজনৈতিক আলোচনার বিষয় থাকবে, বলেও জানান তিনি।
একই সভায় তিনি জাতির উদ্দেশ্যে বলেন, গণহত্যার বিচারের অগ্রগতিতে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউশন টিমের কাজের প্রশংসা করেন। তবে নির্বাচনী অবস্থা সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে তিনি রাজনৈতিক দলের একতাবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৈঠকে উপস্থিত নেতারা দাবি-দাওয়া ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেছেন; এছাড়া তারা নির্বাচন-বিষয়ক সময়সূচি, নেতৃত্ব শৃঙ্খলা এবং গণঅধিকার সংরক্ষণের উপায় সম্বন্ধে মতবিনিময় করেন।