রাজনীতি ডেস্ক | ২৮ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও ইবনে সিনা হাসপাতালের সঙ্গে জামায়াতের কোনো ধরনের মালিকানাগত বা প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এদিনের বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উত্থাপিত একটি আপত্তির বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনায় আসে। বিএনপি অভিযোগ করেছে, ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো জামায়াতের নিয়ন্ত্রণাধীন, ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দিলে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “বিএনপির এই দাবি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এ অভিযোগের ঘোর বিরোধিতা করছি। ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনার মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জামায়াতের কোনো মালিকানার সম্পর্ক নেই। তারা অকারণে এসব প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপিও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। চাইলে আমরাও অভিযোগ দিতে পারতাম, কিন্তু আমরা দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে তা করিনি।”
এর আগে, গত ২৩ অক্টোবর বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে ৩৬ দফার একটি প্রস্তাবনা জমা দেয়। প্রস্তাবনাটিতে বলা হয়, নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে ‘দলীয় প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে পরিচিত কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ভোটগ্রহণ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
প্রস্তাবনায় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও ইবনে সিনা ট্রাস্টের মতো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলে তা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার ওপর প্রশ্ন তুলবে।
বিএনপি আরও দাবি করে, ইসলামী ব্যাংক সম্প্রতি সারাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করেছে এবং সেখানে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করেছে—যা নির্বাচনের প্রশাসনিক কাঠামোয় পক্ষপাত সৃষ্টি করতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
বিএনপির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন কমিশনে ১৮ দফার একটি পাল্টা প্রস্তাব জমা দিয়েছে। দলটি দাবি করে, বিএনপির উত্থাপিত অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং নির্বাচনী পরিবেশকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আমরা চাই নির্বাচন কমিশন সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করুক। কিন্তু অযথা কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম টেনে এনে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করলে নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করছে। পোলিং অফিসার ও অন্যান্য ভোটগ্রহণ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা, পেশাগত দক্ষতা ও প্রশাসনিক মানদণ্ডকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করেছে, কোনো নির্দিষ্ট দলীয় প্রভাবাধীন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ভোটগ্রহণ কাজে নিয়োগ দেওয়া হলে তা যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় আসবে এবং প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ইবনে সিনা ট্রাস্ট দেশের ব্যাংকিং ও স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। তবে অতীতে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ও পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে জামায়াত-সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের নাম উঠে আসায় রাজনৈতিক পরিসরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কাঠামো, পরিচালনা পর্ষদ ও মালিকানায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের প্রাক্কালে এ ধরনের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস বাড়াতে পারে, যা সামগ্রিক নির্বাচনী পরিবেশের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।