রাজনীতি ডেস্ক
ঢাকা, রোববার, ২৩ নভেম্বর: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন ছাড়া দেশ ভালোর দিকে এগোবে না। তিনি বলেন, গণতন্ত্র থেকে সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং বিএনপি রাজনৈতিক সহনশীলতা বজায় রেখে কাজ করছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সভায় আয়োজিত হয়েছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফার “আগামীর রাষ্ট্র ভাবনা ও দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা” বিষয়ক আলোচনা।
আমীর খসরু বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যত ধ্বংসের দিকে গেছে। কর্মসংস্থানের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষার সামঞ্জস্য নেই। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা মূলত সাধারণ একাডেমিক ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা ম্যাট্রিক, ইন্টারমিডিয়েট, স্নাতক, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার দিকে জোর দিচ্ছে। কিন্তু দেশের ভোকেশনাল এবং প্রযুক্তি খাতের চাহিদার প্রতি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না।
চীনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে প্রাথমিক স্কুল পর্যায় থেকে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোকেশনাল স্কুলে ভর্তি হয়। এভাবে তারা ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, মেশিনিস্ট ইত্যাদি পেশায় প্রশিক্ষিত হয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমর্থন করছে। তিনি সতর্ক করেন যে, বাংলাদেশেও স্কিল ডেভেলপমেন্ট ছাড়া শিল্প, আইটি সেক্টর বা ফ্যাক্টরিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।
আইটি খাতকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির লক্ষ্য এক কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির। এজন্য ভোকেশনাল ট্রেনিং, আইটি ট্রেনিং এবং শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি জানান, ম্যাট্রিক, ইন্টারমিডিয়েট, স্নাতক পাশ করা বিপুলসংখ্যক বেকার তরুণ-তরুণীকে স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে কর্মজীবনে যুক্ত করা হবে।
কল সেন্টার শিল্পকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোতে লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী কল সেন্টারে কাজ করছে এবং বাংলাদেশেও এ খাতে বড় কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই কর্মসূচি কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়নযোগ্য এবং জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
সাংঘর্ষিক রাজনীতি এড়িয়ে সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি সংঘর্ষের রাজনীতিতে অংশ নেবে না। তিনি বলেন, মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে, তবে সম্মান প্রদর্শন অপরিহার্য। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সহনশীলতা ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো উন্নয়ন বা কর্মসূচি সফল হবে না বলেও তিনি সতর্ক করেন। নতুন প্রজন্মকে সামনে এনে নতুন রাজনৈতিক ধারার সূচনা করা হয়েছে এবং এখন আর শুধুমাত্র মেধা ছাড়া কোনো রাজনীতি কার্যকর হবে না। নেতৃবৃন্দকে তিনি সতর্ক করেন, রাজনীতিকে নতুন প্রজন্মের চিন্তাভাবনা, যুক্তি এবং তথ্যের ভিত্তিতে সাজাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনের পর দেশের মানুষের মধ্যে বিশাল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপি সেই প্রত্যাশাকে ধারণ করছে এবং রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বসহকারে কাজ করছে। যারা জনগণের আকাঙ্ক্ষা গ্রহণ করতে পারবে না, তাদের রাজনীতি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেকসই হবে না।