নিজস্ব প্রতিবেদক
আম জনতার দলের সদস্যসচিব মো. তারেক রহমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওবার্তায় দাড়িপাল্লা প্রতীকের ব্যবহার ও রাজনৈতিক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন, যা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভিডিওবার্তাটি সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হয়।
ভিডিওতে তিনি বলেন, দাড়িপাল্লা প্রতীক অতীতে প্রতারণা ও অনিয়মে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে এর ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে গেছে। তারেক রহমানের দাবি, ওজন মাপার ক্ষেত্রে দাড়িপাল্লা সহজেই কারসাজির সুযোগ তৈরি করে এবং এ ধরনের অনিয়ম বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। তিনি উদাহরণ হিসেবে মাংস ও সবজির দোকানের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে দাড়িপাল্লা ব্যবহারের মাধ্যমে ওজনে হেরফের করার অভিযোগ অতীতে পাওয়া গেছে। তারেকের ভাষ্য অনুযায়ী, এই কারসাজির সম্ভাবনাই দাড়িপাল্লাকে ধীরে ধীরে অপ্রচলিত করে দেয়।
তিনি বলেন, দাড়িপাল্লার কাঠামো এমন যে সামান্য কৌশল প্রয়োগ করে ওজন নিয়ে প্রতারণা করা যায়। এজন্য ক্রেতারা ধীরে ধীরে এ ধরনের ওজন মাপার যন্ত্রের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন। তার মতে, প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে আধুনিক ও ডিজিটাল ওজন মাপার যন্ত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা দাড়িপাল্লার বিকল্প হিসেবে বাজারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারেক রহমানের ব্যাখ্যায় উঠে আসে যে, ওজন নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতার প্রয়োজনীয়তার কারণেই পুরোনো যন্ত্রটি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।
ভিডিওবার্তায় তিনি আরও বলেন, দাড়িপাল্লা নিয়ে তার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জামায়াত শিবিরের রাজনৈতিক কর্মীরা তার প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তারেক রহমান দাবি করেন, তার বক্তব্যকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে যেন তিনি কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, দাড়িপাল্লা প্রতীক সম্পর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিরোধী রাজনৈতিক অংশের কিছু নেতাকর্মী তার অবস্থানকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছেন।
এ ছাড়া তিনি ভিডিওতে প্রকাশিত আরও কিছু মন্তব্যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বক্তব্যের সমালোচনা করেন। ভিডিওতে তিনি উল্লেখ করেন, কোনো কোনো ধর্মীয় বক্তা রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবে কি না, সে বিষয়ে ধর্মীয় সিদ্ধান্তের কথা বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছেন। তারেক রহমান বলেন, কিছু বক্তব্যে এমনভাবে মত প্রকাশ করা হয়েছে যেন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পূর্বনির্ধারিত এবং কিছু গোষ্ঠী তা আগেভাগেই জেনে যাচ্ছে। তার মতে, এসব দাবি রাজনৈতিক অঙ্গনে অযাচিত বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
তিনি আরও দাবি করেন, কিছু বক্তা এমন মন্তব্যও করেছেন যে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নির্দেশ অনুযায়ী চলবে। তারেক রহমান এসব বক্তব্যকে দায়িত্বহীন ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দেশে আইন ও প্রশাসন নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয় এবং কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নির্দেশে চলার বিষয়টি সংবিধান ও প্রশাসনিক বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
তারেক রহমানের এসব মন্তব্য প্রকাশের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওতে ওঠা বক্তব্য প্রসঙ্গে বিভিন্ন মহলে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনপূর্ব সময়ে সংবেদনশীল রাজনৈতিক বক্তব্য সহজেই বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে এবং বিভিন্ন পক্ষ তা নিজেদের ব্যাখ্যায় ব্যবহার করতে পারে। তাদের ধারণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত রাজনৈতিক মন্তব্য বর্তমান সময়ে জনমানসে দ্রুত প্রভাব ফেলে, যা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
এদিকে, দাড়িপাল্লা প্রতীক সম্পর্কিত মন্তব্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার বিষয় হয়েছে। অতীতে গ্রাম ও শহরে দাড়িপাল্লা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মাপযন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনায় সঠিক ওজন নিশ্চিত করতে আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ফলে পুরোনো মাপযন্ত্র ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারালেও প্রতীকের ব্যবহার রাজনৈতিক যোগাযোগে এখনো বিদ্যমান।
তারেক রহমানের ভিডিওবার্তা রাজনৈতিক বিতর্কের পাশাপাশি প্রতীক ব্যবহারের ইতিহাস, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এবং ধর্মীয় বক্তব্যের রাজনৈতিক প্রভাব—এই তিনটি বিষয়ের দিকেও আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভিডিওটি ঘিরে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরও প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন, তবে বর্তমানে এর প্রভাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে।