অনলাইন ডেস্ক
দীর্ঘদিন ধরে দেশে মাজার ভাঙার ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসা লেখক ও গবেষক ফরহাদ মজহার বলেছেন, এ বিষয়ে সরকারের উদাসীনতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। সোমবার এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পোস্টে তিনি চলমান ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে নিজ অবস্থান তুলে ধরেন এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।
পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, বিখ্যাত পালাকার ও বাউলধর্মী গানের শিল্পী আবুল সরকারের মুক্তি দাবি এবং মানিকগঞ্জে বাউল ও ভক্তদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘সাধুগুরুভক্ত ও ওলি-আওলিয়া আশেকান পরিষদ’ এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। তিনি সকলকে শান্তিপূর্ণভাবে উপস্থিত থেকে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান।
ফরহাদ মজহার বলেন, ধর্মীয় বিশ্বাস, মতাদর্শ বা সামাজিক পরিচয় নির্বিশেষে সমাজে সহনশীলতা ও পারস্পরিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সচেতন নাগরিকদের অংশগ্রহণ জরুরি। তিনি জানান, যে সকল মানুষ আধ্যাত্মিক চর্চা, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক শান্তিতে বিশ্বাসী— তাদের জন্য এই প্রতিবাদ কর্মসূচির তাৎপর্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।
তিনি আরও বলেন, দেশে বহুদিন ধরে মাজার ভাঙা, আধ্যাত্মিক চর্চার স্থানগুলোতে হামলা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতায় আঘাত হানে এমন বিভিন্ন ঘটনার বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে বক্তব্য রাখা হলেও সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে সামাজিক বিভাজন আরও তীব্র হতে পারে।
বাউল আবুল সরকারকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর মাজারভিত্তিক সামাজিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় তাকে বহু মানুষের কাছে অগ্রণী সাধক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বিভিন্ন সমাবেশে তার উপস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গীদের অনুপ্রাণিত করেছে বলেও উল্লেখ করেন ফরহাদ মজহার। তার ভাষ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে মামলা না দেওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, কোনো বক্তব্য বা শব্দচয়ন নিয়ে আপত্তি থাকলে তার পক্ষ থেকে ভক্তরা ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু তারপরও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়াকে সংশ্লিষ্ট মহল অযৌক্তিক বলে মনে করছে। এর মাধ্যমে কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।
মানিকগঞ্জে বাউলদের ওপর হামলার ঘটনাকে তিনি উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেন। তার দাবি অনুযায়ী, হামলার পর অনেকেই প্রাণ রক্ষায় পানিতে ঝাঁপ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি মনে করেন, সামাজিক বিরোধ সমাধানে সংলাপ না করে দমনমূলক পদ্ধতি অবলম্বন করায় উত্তেজনা ও সংঘাত বৃদ্ধি পেয়েছে।
পোস্টে তিনি আরও উল্লেখ করেন, আগামী দিনের কর্মপন্থা ও দীর্ঘমেয়াদি দাবিগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতিবাদ সমাবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তার মতে, সমাজে ভক্তি, আধ্যাত্মিকতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মূল্যবোধ টিকিয়ে রাখতে সংগঠিতভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া জরুরি। তিনি বলেন, মানবিক সহমর্মিতা ও যুক্তিবোধের ওপর ভিত্তি করে মতবিরোধ সমাধান করা সম্ভব হলেও জোর-জবরদস্তি বা মামলার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান পাওয়া যায় না।
সাম্প্রতিক এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ভিন্নমতাবলম্বী ও আধ্যাত্মিক চর্চাকারী সম্প্রদায়ের উদ্বেগগুলো সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে। একই সঙ্গে সবার অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যাগুলোর সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে তিনি মত দেন।
তিনি আরও জানান, সমাবেশে উপস্থিত জনসাধারণের মতামত ও দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা মাজার ও আধ্যাত্মিক চর্চার ওপর হামলা বন্ধ, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি এবং সামাজিক সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।