নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের গণমাধ্যম কাজের পরিবেশ সংকটের মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া ও নীতিমালা সংস্কারে অনাগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের অভাবে পেশাদার সাংবাদিকতার কাজের পরিবেশ দীর্ঘ সময় ধরে অবনতি করেছে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিজেসির আয়োজন করা মতবিনিময় সভায় নুর এই মন্তব্য করেন। তিনি সভায় গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন কাঠামো এবং তাদের পেশাদার অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়েও আলোকপাত করেন। নুর বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হলেও গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো আলোচনায় আসে না। গত ১৬ বছরে গণমাধ্যমের লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে যথাযথ সংস্কার হয়নি, ফলে গণমাধ্যমের স্বতন্ত্রতা ও কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়ে আগ্রহী নন। তারা সাধারণত বলে, ‘অল্প সময়ের জন্য এসেছি’।”
নুর সরকারের ভূমিকা সম্পর্কেও মন্তব্য করেন এবং বলেন, “গণমাধ্যমকে কাজের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা সরকারের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব কোনো সরকার পূর্ণভাবে পালন করেনি। যদি এবারের পরিবর্তন কার্যকর না হয়, তবে গণমাধ্যমের কার্যকারিতা ও স্বাধীনতা পুনঃস্থাপন সম্ভব নয়। গণমাধ্যম নীতিমালা বাস্তবায়নে সবাইকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।”
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, “গণমাধ্যম না থাকলে রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যায়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রাষ্ট্র পরিচালনায় জবাবদিহিতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই মিডিয়ার মালিকানায় কাঠামোগত পরিবর্তন এবং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে শক্তিশালী নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।”
বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশের গণমাধ্যম স্বাধীনতা এবং পেশাদার সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে নীতিমালা ও কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি। লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া, বেতন কাঠামো এবং কর্মপরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান ছাড়া সাংবাদিকরা কার্যকরভাবে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রতিবেদন তৈরি করতে সক্ষম হবেন না।
এ ধরনের মতবিনিময় সভা সরকারের নীতি নির্ধারণ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার উদ্যোগে গণমাধ্যম খাতের উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট তৈরি করে। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য আরও স্বচ্ছ ও সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সাংবাদিকতা ও সংবাদ পরিবেশকে শক্তিশালী করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সরকারি নীতিমালার কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং গণমাধ্যম খাতের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি মালিকানা কাঠামো, বেতন কাঠামো ও স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়গুলো নিয়েও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের পদক্ষেপগুলো দেশের গণমাধ্যমকে আরও স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল ও স্বাধীন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হবে।