বিশেষ প্রতিনিধি
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছেন, নির্বাচিত হতে পারলে তিনি কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করবেন না। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ঘোষণায় তিনি এ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ দায়িত্ব পালনের বিষয়ে তিনি বেশ কিছু নীতিগত অবস্থান তুলে ধরেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ সদস্য হিসেবে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ভাতা, অ্যালাউন্স বা অন্যান্য আর্থিক সুবিধা তিনি নিজস্ব বা পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন না। বরং এসব সুবিধা জনকল্যাণে উন্মুক্ত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, সংসদ সদস্যদের জন্য নির্ধারিত যে কোনো অনারিয়াম বা অন্যান্য আর্থিক সুবিধা জনগণের সেবায় ব্যয় করার জন্য তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবেন। জনগণের অর্থ জনগণের কাছে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান।
ঘোষণায় তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি সংসদ সদস্যদের জন্য বরাদ্দ ট্যাক্স-ফ্রি গাড়ির সুবিধা ব্যবহার করবেন না। সংসদ সদস্যরা সাধারণত শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ পান, তবে তিনি এ সুবিধা নেবেন না বলে জানান। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক স্বার্থে প্রশাসনকে ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন তিনি। প্রশাসনের ব্যবহারে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন এবং নিশ্চিত করেন যে সরকারি কাজ ছাড়া কোনো ধরনের প্রটোকল তিনি গ্রহণ করবেন না।
তিনি জানান, জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে ঢাকায় কিংবা সুনামগঞ্জে তাঁর দফতর সর্বদা সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। জনগণের সমস্যার বিষয়ে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ রাখা এবং প্রতিনিধিত্বমূলক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের বিষয়টি তিনি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে পরিবার বা আত্মীয়স্বজনদের কোনো ধরনের অবৈধ প্রভাব বিস্তার থেকে বিরত রাখার পদক্ষেপ নেবেন এবং তাদের মাধ্যমে কোনো সুবিধা গ্রহণের সুযোগ থাকবে না।
ঘোষণায় শিশির মনির বলেন, তিনি জনগণের সামনে সবসময় জবাবদিহিমূলক অবস্থানে থাকতে চান। সরকারি তহবিলের ব্যবহারে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং নিয়মিত হিসাব প্রদানকে তিনি অপরিহার্য বলে মনে করেন। অর্থব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার পাশাপাশি তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বশীল আচরণের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন ও জনগণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারি তহবিল যথাযথভাবে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত তার এ ঘোষণায় নির্বাচিত হলে কীভাবে জনসেবার ক্ষেত্রটি পরিচালনা করবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। সংসদ সদস্যদের নানান আর্থিক সুবিধা গ্রহণের প্রচলিত ব্যবস্থা থেকে নিজেকে দূরে রাখার ঘোষণা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি ভিন্নমাত্রার বার্তা দেয়। নির্বাচনী এলাকায় জনমানুষের আস্থা অর্জন এবং তাদের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
প্রার্থীর এসব ঘোষণায় রাজনৈতিক প্রার্থীতার সঙ্গে যুক্ত জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। নির্বাচনের আগে এমন প্রতিশ্রুতি ভোটারদের মধ্যে প্রতিনিধিত্বমূলক দায়িত্ব পালনে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। বিশেষ করে সংসদ সদস্যদের সরকারি সুবিধা গ্রহণ নিয়ে দেশে যখন আলোচনার বিস্তার রয়েছে, তখন কোনো প্রার্থীর এসব সুবিধা বর্জনের ঘোষণা ভোটারদের আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে। ভবিষ্যতে নির্বাচিত হলে তিনি এসব প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবেন, তা নির্ভর করবে তার কার্যক্রম ও দায়িত্বপালনের ওপর।
ঘোষণায় উপস্থাপিত প্রতিশ্রুতিগুলো নির্বাচনী এলাকার জনগণকে দায়িত্বশীল প্রতিনিধিত্বের একটি চিত্র দেয়। স্বচ্ছতা, সুশাসন এবং জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এসব প্রতিশ্রুতি ভবিষ্যতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নির্বাচনী প্রতিযোগিতার এই সময়ে প্রার্থীর এ ধরনের ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।