রাজনীতি ডেস্ক
জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে। রায় ঘোষণার পর থেকে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব এবং দেশে তার প্রত্যাবর্তন জাতীয় রাজনীতিতে প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায় আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ উল্লেখ করেন, রায়টি কার্যত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক যাত্রার ইতি টেনেছে এবং নেতৃত্বর গুরুত্বপূর্ণ ভুলের পর ফের পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা সীমিত।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রায়কে ‘রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত’ এবং ‘ফরমায়েশি’ হিসেবে অভিহিত করে প্রত্যাখ্যান করেছে। দলীয় অনেক নেতা বলছেন, রায়ের ঘোষণার পরও তারা আতঙ্কিত নন এবং মাঠপর্যায়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম সচল রয়েছে। তথাপি, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে এই রায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দলীয় কিছু নেতার মতে, রায়কে প্রত্যাখ্যান করা হলেও এর রাজনৈতিক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে।
পূর্ববর্তী এক বছরে দলের নেতৃত্ব শূন্যতার সমস্যাকে কাটিয়ে সংগঠন পুনরায় সক্রিয় হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও যোগাযোগ এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রদত্ত নির্দেশনার অংশ। অন্তর্বর্তী সরকার তাকে দেশে ফেরানোর আহ্বান জানালেও, ভারত এই অনুরোধে সাড়া দেবে এমন সম্ভাবনা সীমিত বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা উল্লেখ করছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বড় অংশ এখনও দেশে ফিরে আসতে পারবে না বলে ধারণা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলকে পুনর্গঠিত করা এবং রাজনৈতিক কাঠামো সুসংহত করা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষত জুলাই আন্দোলনের সময় নিহতদের বিষয়ে দলীয় অবস্থান জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ আরও বলেন, যদি শেখ হাসিনা আন্দোলনের সময়ের প্রাণহানির জন্য রাজনৈতিক দায় স্বীকার করে দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে যেতেন, তবে আওয়ামী লীগের টিকে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেত। তিনি বলেন, “এখন তিনি নিজেই দলকে আরও কঠিন পথে ঠেলে দিচ্ছেন।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের ভেতরের স্থিতিশীলতা বজায় থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে আওয়ামী লীগের টিকে থাকা এবং শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে নতুন রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে ওঠার প্রশ্নে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক কার্যক্রম, নেতৃত্বের পুনর্গঠন এবং দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আওয়ামী লীগের অবস্থান ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে প্রভাবিত করবে।