নিজস্ব প্রতিবেদক
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে ভারতের প্রভাবাধীন একটি রাজনৈতিক দল ছিল এবং দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকে তারা বাংলাদেশের ওপর প্রতিবেশী দেশের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি করেছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে নুরুল হক নুর বলেন, দেশে শক্তিশালী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি, যার ফলে নাগরিক নিরাপত্তা এবং জবাবদিহিতার প্রশ্নে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তার দাবি অনুযায়ী, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় বিভিন্ন স্থানে অপরাধ সংঘটিত হলেও নিরাপত্তাহীনতা কাটছে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি ঢাকার বনশ্রী এলাকায় এক ব্যবসায়ীর ওপর গুলি করে স্বর্ণ ছিনতাই, মোহাম্মদপুরে এক রাজনৈতিক নেতাকে গুলি করে হত্যা এবং পুরান ঢাকায় গুলি চালানোর ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এসব ঘটনা প্রমাণ করে দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, অতীতে ক্ষমতাসীন শক্তির দমনমূলক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তন এলেও, পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তার বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে বিভিন্ন গোষ্ঠী নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে ভিন্নমুখী তৎপরতা চালাচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে নুরুল হক নুর জানান, ২০১৮ সালে ওই আন্দোলনের সময় সরকারের পক্ষ থেকে দুই নেতা—জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং এনামুল হক শামীম—আলোচনার দায়িত্ব পান। তিনি বলেন, সংসদ ভবনে আলোচনার এক পর্যায়ে তারা অতীত রাজনৈতিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছিলেন। নুরের দাবি অনুযায়ী, আলোচনার সময় তারা ২০০৬ সালের রাজনৈতিক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ক্ষমতাসীন জোটবিরোধী আন্দোলনে সীমান্তসংলগ্ন এলাকার কিছু সুবিধা পাওয়া গিয়েছিল, যার মধ্যে পিকেটিং ও ভাঙচুরের মতো কর্মকাণ্ডের বিষয়ও উঠে আসে।
তার মতে, অতীতে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় সীমান্ত এলাকায় অপরাধীদের যেভাবে চলাচলের সুযোগ হয়েছিল, বর্তমানেও অপরাধ সংঘটনের পর এ ধরনের পালানোর সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না। নুরের বক্তব্য অনুযায়ী, সীমান্ত নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী না হলে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরা সীমান্ত পথ ব্যবহার করে পার হতে পারে এবং এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
নুরুল হকের এসব বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সম্পর্ক, সীমান্তসংক্রান্ত নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং অতীত রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত মন্তব্যগুলো গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নুরুল হকের দাবি ও উপস্থাপিত অভিজ্ঞতাগুলো বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে এবং বিভিন্ন মহল বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে পারে।
বাংলাদেশে সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আইনের শাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে নগর এলাকায় অপরাধ প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার কার্যকারিতা এবং নজরদারি জোরদার করার প্রশ্ন সামনে আনছে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার শক্তিশালীকরণও ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
নুরুল হক নুরের মন্তব্য এবং আলোচনায় উল্লেখিত উদাহরণগুলো দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর অতীত ভূমিকা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনার সুযোগ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ইস্যুতে স্পষ্ট অবস্থান ও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ভবিষ্যতে দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।