মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, প্রাণী সুস্থ থাকলে এবং তাদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা হলে মানবজাতি নিরাপদ থাকবে। তাঁর মতে, স্বাস্থ্যবান প্রাণী থেকে প্রাপ্ত খাদ্যও মানবস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ হয়, যা মানুষের সুস্থতার অন্যতম মূল চাবিকাঠি।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের অডিটরিয়ামে নবীন ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েটদের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফরিদা আখতার। তিনি আরও বলেন, “প্রাণী সুস্থ থাকলে, মানবশরীরও সুস্থ থাকে, এবং এই সম্পর্কের মাধ্যমে আমাদের খাদ্য সুরক্ষিত থাকে।”
এ সময় উপদেষ্টা ফরিদা আখতার দেশে প্রাণিসম্পদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “দেশে ১৮ কোটি মানুষের চিকিৎসার জন্য প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে ৯ জন মেডিকেল ডাক্তার থাকা প্রয়োজন, কিন্তু একই সময়ে প্রায় ৫ কোটি প্রাণীর জন্য প্রতি উপজেলায় মাত্র একজন ভেটেরিনারিয়ান দায়িত্ব পালন করছেন। এটি একটি বড় বৈষম্য।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন না প্রতি উপজেলায় তিন থেকে চারজন ভেটেরিনারিয়ান থাকতে পারবে না?
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আরও বলেন, ভেটেরিনারি সেবা সম্প্রসারণ এবং এর গুরুত্ব বৃদ্ধির জন্য সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ভেটেরিনারি আইন এবং ফিড আইন সম্পর্কে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, “ভেটেরিনারি আইন প্রণয়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে, শিগগিরই তা মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে।” তিনি ফিড আইনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, “ফিড আইন প্রণয়ন না হলে প্রাণী খাদ্যকে নিরাপদ রাখা সম্ভব নয়।”
এছাড়া, ভেটেরিনারি সেবা ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নের জন্য বিদেশে দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান পাঠানোর বিষয়েও তিনি মতামত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “দক্ষ ভেটেরিনারিয়ানদের বিদেশে পাঠালে দেশের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে এবং তারা বিদেশে সম্মানের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি দেশের প্রয়োজনীয়তা পূরণে সহায়তা করবে।”
তিনি ভেটেরিনারিয়ানদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমাদের কাছে কোন প্রাণীই খেলনা নয়; প্রতিটি প্রাণীর সেবার অধিকার রয়েছে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর একযোগে প্রাণী সেবা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
এছাড়া, দেশের ভেটেরিনারি শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “প্রাণিসম্পদের বাস্তব প্রয়োজন বিবেচনায় ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং অ্যানিম্যাল সায়েন্সকে কম্বাইন্ড ডিগ্রি হিসেবে চালু করা হবে।” এই পদক্ষেপটি প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন এবং নতুন প্রজন্মের ভেটেরিনারিয়ানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের (বিভিএ) উদ্যোগে এবং এনিম্যাল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আহকাব) সহযোগিতায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. বাহানুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ড. মো. বয়জার রহমান, আহকাবের সভাপতি সায়েম উল হক এবং বিসিএস লাইভস্টক ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ডা. মো. আ. মান্নান মিয়া। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ডা. মো. তারেক হোসেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন এবং ভেটেরিনারি সেবার প্রসারে সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্যে প্রাণী সুস্থতা, নিরাপদ খাদ্য এবং যথাযথ ভেটেরিনারি সেবার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, যা দেশের জনগণের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।