জাতীয় ডেস্ক
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটিকেই মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি। বুধবার (৫ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দুর্ঘটনাটি মূলত পাইলটের উড্ডয়নজনিত ত্রুটির কারণে ঘটে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এমন ঝুঁকি এড়াতে বিমানবাহিনীর সব প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ঢাকার বাইরে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রেস সচিব আরও জানান, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন নির্মাণে রাজউকের ভবন নির্মাণ নীতিমালা যথাযথভাবে মানা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনে রাজউকের তদারকির ঘাটতিও চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে রাজউককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ, ক্ষয়ক্ষতি, এবং ভবিষ্যতে অনুরূপ দুর্ঘটনা রোধে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত সুপারিশ জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়নের সময় নির্ধারিত উচ্চতা ও গতি নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে বিমানটির ভারসাম্যহীনতার কারণ হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই মডেলের প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনায় পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামসহ কয়েকজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীও ছিল।
দুর্ঘটনার পরপরই বিমানবাহিনী ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) যৌথভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি কয়েক মাসের অনুসন্ধানের পর বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী রাজধানীর আকাশসীমায় প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, শহরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশে বিমান চলাচল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন নির্দেশনা জারি করার বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন এবং নিহতদের পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে বিমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আরও নিরাপদ করতে হবে।”
সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।