রাজনীতি ডেস্ক
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনরত জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি ইসলামি দল আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মারকলিপি পেশ করবে।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জামায়াত ও অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে শাপলা চত্বরের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। সেখান থেকে পুরানা পল্টন মোড় পর্যন্ত মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র উদ্দেশে যাত্রা করবেন বলে সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন জানান, মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে শাপলা চত্বর থেকে একটি মিছিল শুরু হবে। এতে পল্টন এলাকার বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মীদের পাশাপাশি আন্দোলনরত অন্যান্য ইসলামি দলগুলোর প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন। সমাবেশ শেষে প্রতিনিধি দলটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের দাবি-দাওয়া সংবলিত স্মারকলিপি হস্তান্তর করবে।
এর আগে বুধবার (৫ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)-এর সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ জানান, বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে লিখিতভাবে তাদের দাবি পেশ করা হবে। তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত—গণভোট অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনের আগে এবং পৃথক দিনে আয়োজন করতে হবে।”
ইসলামি আটটি দলের পক্ষ থেকে উত্থাপিত পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—
১. জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য সরকারি আদেশ জারি এবং নভেম্বরে গণভোট আয়োজন;
২. জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু;
৩. অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা;
৪. পূর্ববর্তী সরকারের সময় সংঘটিত জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার নিশ্চিত করা;
৫. জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
দলগুলোর নেতাদের দাবি, উল্লিখিত পাঁচ দফা বাস্তবায়ন ছাড়া সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা বলেন, নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের মতামত নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
এই যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়া আটটি ইসলামি দল হলো—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি)।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি রাজনৈতিক পরিসরে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে প্রশাসন জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে স্মারকলিপি পেশের কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হবে না। তবে জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।